Here I'm talking a Bangla Sad Story in Bangla font.
Read this full story and comment your feelings below.
জড়া থেকে জড়
লিখেছেন: রিফু
দুপুর বেলা খাওয়া শেষে রোজ নিয়ম করে ঘুম পাড়ানো হয় আমাকে। আমার ঘুমুতে ভালো লাগে না। কিন্তু বউমার শাসনে ঘুমুতে হয়।
ছেলের সাথে ইদানিং বলতে গেলে দেখাই হয় না আমার। ও ফেরে রাত করে, একদম অনেক রাত করে। ওর ফেরার আগেই বউমা আমাকে ঘুমুতে পাঠিয়ে দেয়। বাবার বয়সী হওয়ার পরেও বউমাকে কেন যেন আমি তখন না বলতে পারি না। বয়স হচ্ছে, তাই হয়তো।
ছুটির দিনগুলোতে অবশ্য ছেলের সাথে দেখা হয় আমার। আমার ছেলে এখনো কোনো সন্তান নেয় নি। অবশ্য তাতে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি চিরকাল শিশুবিরোধী মানুষ। প্রজ্ঞাকে যখন বিয়ে করেছিলাম, তখন কাগজে কলমে শর্ত পর্যন্ত করেছিলাম যে আমরা কোনোদিন বাচ্চা নিবো না। অনেকদিন পর্যন্ত শর্ত ঠিকও ছিলো। তারপর হঠাৎ একদিন শুনি মা আর প্রজ্ঞা মুচকি মুচকি হাসে! ব্যাপার কি এগিয়ে যেয়ে জিজ্ঞাসা করতেই জানালো প্রজ্ঞার পেটে নাকি বাচ্চা! আমি শুনে তব্দা খেয়ে গেলাম। ভালো, খারাপ কোনো অনুভূতিই হচ্ছিলো না । সম্ভবত অবচেতনভাবে আমিও তখন চাচ্ছিলাম আমার কোনো একটা উত্তরাধিকারী আসুক। মাও সেদিনগুলোতে বড্ড বেশি প্যানো প্যানো করতো একটা নাতির জন্য। অত:পর বেশ আয়োজনের সাথেই রাদ জন্মগ্রহন করলো। আমি সবসময়ই দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম ওর থেকে। থাকতে পারতামও, কারণ তখন আমার ব্যবসা মাত্র ফুলে ফেঁপে উঠছে, প্রচুর সময় দিতে হয় সেদিকটায়। ছেলের প্রতি যে একেবারেই কোনো টান আমার ছিলো না তাও অবশ্য সত্যি না। কিন্তু সেই টান ঠিক পিতৃসুলভ ছিলো না। আসলে তখন আমি যুবা ছিলাম, মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে ভালোবাসতাম। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের কী আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়? যায় হয়তো, কিন্তু আমার তা ভালো লাগে না। বিরক্তি ধরে যায়।
Your're reading Bangla Sad Story. Carry on.
এখন আমি বৃদ্ধ হয়েছি। এখন মাঝে মাঝে আমার মনে হয় ছেলেকে আলাদা করে একটু সময় দিলে একেবারে ক্ষতির কিছু হত না। সবকিছুই আসলে একবার করে চেঁখে দেখা দরকার। এখন মাঝে মাঝেই মনে অদ্ভুত একটা ভাবনা ঘোরাফেরা করে। আচ্ছা একজন মানুষ যদি একই স্মৃতি নিয়ে দুবার জন্মগ্রহণ করতে পারতো তাহলে কেমন হত? এই সামান্য জীবন তো কোনোভাবেই যথেষ্ট নয় কারো জন্য। বলতে গেলে প্রায় সব বিকল্প চিন্তাই অপূর্ণ রেখে ফেলে যেতে হয় দুনিয়াতে এই স্বল্প দৈর্ঘ্যের সময়সীমার জন্য।
ছুটির দিনগুলোয় ছেলের সাথে দেখা হয় আমার। আমার ছেলে যেকোনো কারণেই হোক, আমাকে মোটামোটি সমীহ করে চলে। বউয়ের মত ধমক দেবার সাহস তার নেই। সাহস নেই, বউমার মতো উষ্ণ আন্তরিকতাও নেই তার ভেতরে। সে হয়েছে অনেকটা আমার মত । সম্পূর্ণ আমার মত না, আচার আচরণের দিক থেকে বিবেচনা করতে গেলে ওর চরিত্রে ওর মায়ের প্রভাবটাই বেশি পড়েছে। এবং সেটা পড়াই স্বাভাবিক। কারণ, শৈশব থেকে কৈশরে পা দেয়ার আগ পর্যন্ত ও ওর মার সাথেই বেশিরভাগ সময় পার করেছে। মাকে বেচারা বড্ড ভালোবাসতো। আর ওকে আমাদের বাড়ির সবাই।
ছুটির দিনগুলোয় আমার ছেলে খাবার টেবিলে বসে বসে মাঝে মাঝে এটা সেটা ইতস্তত করে জিজ্ঞাসা করে। আমিও ঠাণ্ডা গলায় সেসবের উত্তর দেই। আমি চিরকালই ঠাণ্ডা স্বভাবের। যদি আর একটু রাশভারী স্বভাবের হতে পারতাম তাহলে হয়তো বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিরাতে ছেলের দু গালে ত্রিশটা ত্রিশটা করে ষাটটা চড় কষাতে দ্বিধা করতাম না। বাবা হিসেবে সেটুকু আমি করতেই পারি। সেটুকু করার হক আমার আছে। কিন্তু আমি করতে পারি না। যে ছেলের মা ছেলের বারো বছর বয়সে অন্য কারো সাথে সুখের বাসা বাধতে পালিয়ে যায় তাকে বিয়ের পর পরকীয়ার জন্য তেমন দোষ আসলেই কী দেয়া যায়? অবশ্যই যায়। কিন্তু আমি দোষ দিতে পারি না। কারণ আমি নিজেও তো ঐ সময়টায় ছেলের পাশে ছিলাম না। বাইরে বাইরে ঘুরছিলাম, ব্যবসা বাড়াচ্ছিলাম, প্রজ্ঞার চলে যাওয়ার খবর খুব বেশি একটা দাগ কাটতে পারে নি আমার মনের ভেতর। শুধু একটু ধাক্কা খেয়েছিলাম। একটু শূণ্য অনুভূত হয়েছিলো। একটু লজ্জা, আর মিথ্যে আক্রোশ হয়েছিলো, এই যা! কিন্তু সহজেই আমি এই সবকিছু কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম। বিদেশে বিদেশে ঘুরতাম। আমার তখন বারো বছরের রাদের কথা অবচেতন মনের গভীরেও ভাসতো না। একটু একটু নিগ্রহের চোখে দেখতাম ওকে। এবং সেটা ওর মায়ের কারণেই বোধহয়। কেবল মনে হত, ওকে আমার সাথে দেখলেই বোধহয় আমার পলাতকা স্ত্রীর সম্পর্কে প্রশ্ন করবে মানুষজন। ততদিনের প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতির জীবনে এটুকু তো আমার জানা হয়েই গিয়েছিলো যে, সম্মান অর্জনের চেয়ে অন্যের সম্মান টেনে নামানো অনেক বেশি সহজ, এবং ভালো লাগার। মানুষকে বিব্রত করার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চায় না।
Here you'll find Valobashar Kobita.
সুতরাং আমি সতর্ক থাকতাম। ছেলেকে এক কথায় পুরোপুরি এড়িয়ে চলতাম। বাড়ি কম ফিরতাম। যাও ফিরতাম তাও মায়ের জন্য। মা তখনও জীবিত ছিলেন। তিনিই রাদের দেখাশোনা করতেন। মা মাঝে মাঝে আক্ষেপ করতো। আমার জন্য, রাদের জন্য, ওনার জন্য। প্রাক্তন বউমাকে শাপ-শাপান্ত করতো। এই শাপ-শাপান্তের রোষ মাঝে মাঝে আমার উপর এসেও পড়তো। এক মাত্র ছেলেকে দেখার জন্য হলেও কেন আমি মাসে একবার অন্তত ঘরে ফিরি না, কেন আমি আবার বিয়ে করছি না, কেন আমি রাদের জন্য মা খুঁজছি না ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে তিনি আমার উপর রাগ ঝাড়তেন। আমার প্রকৃতিই এমন যে আমি সেসব কান দিয়ে ঢোকালেও মাথায় রাখতে পারতাম না। ফলে মুখে কোনো অভিব্যক্তি আসতো না। মা আমার নিরুত্তাপ মুখ কোনো কোনোদিন এত রেগে যেতেন যে অভিমানে তার কণ্ঠ বন্ধ হয়ে আসতো। বেশিরভাগ সময়ই তিনি কেঁদে ফেলতেন ।
নিজের মা অন্যলোকের সাথে চলে যাওয়ার পর থেকে রাদ নিজের দাদীর সাথে একঘরেই ঘুমাতো। মা যখন কাদঁতো তখন রাদ ঘুমিয়ে থাকতো। মা যখন চিৎকার করে অভিশাপান্ত করতো, রাদ তখনও ঘুমিয়ে থাকতো। অথচ এতো আওয়াজে কারো পক্ষে ঘুমিয়ে থাকা সম্ভব নয়। ও নিশ্চিত গুম হয়ে দম আটকে কোলবালিশের নীচে মাথা দিয়ে পড়ে থেকে ঘুমুনোর ভান করতো তখন। আমি বুঝেও না বুঝার ভান করতাম। এছাড়া তো আর কিছু করারও ছিলো না আমার।
ছেলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা আমার কল্পনারও অতীত ছিলো।
অবহেলা...এত অবহেলাতেও অবশ্য ছেলের রেজাল্ট খারাপ হত না। দশের ভেতরে থাকতো সবসময়। সাস্থ্যও কোনোদিন ভেঙে পড়তে দেখি নি ওর। বাবার মত লম্বা হলেও বাবার মত হাড্ডিসার কঙ্কাল ও নয়। সুঠাম,তেজী দেহ, দাদীর মত ফরসা গায়ের রঙ। চোখ আর নাক দুটো শুধু প্রজ্ঞার পেয়েছে। চোখা নাক আর গাড় বাদামী চোখে ওকে আরো বেশি মানিয়ে গেছে। বাহ্যিকভাবে সবদিক থেকেই প্রায় নিখুঁত ছেলেটা। তার উপর, ওর হাতে যখন ব্যবসার হাল ছেড়েছিলাম, তার পরবর্তি কয়েক বছরে ওর ব্যবসাবুদ্ধি দেখে আমি নিজেও চমৎকৃত হয়েছি। ছেলেটা খুব সম্ভবত নিজেকে প্রমাণ করতে চায়। সারাজীবনই চাইবে। আমার কাছে, অথবা পৃথিবীর সবার কাছেই। ওর প্রকৃতির অল্প কিছু অংশ হলেও, কার্যকরী অংশটা সম্ভবত আমার মত। আমিও বয়স কম থাকতে মানুষের সামনে নিজেকে প্রমাণ করে দেখাতে চাইতাম। আজীবনই চেয়েছি। কিন্তু একবার কোনো কিছু কারো কাছে প্রমাণ করে ফেলতে পারলে দ্বিতীয়বার আর সেই কাজে আগ্রহ খুঁজে পাই নি। রাদের ব্যাপারটাও একইরকম। চিরকাল ও বাপের নিগ্রহ পেয়েছে। চিরকালই তাও ও বাপের কাছে নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছে। ভালো রেজাল্ট, ব্যবসাক্ষেত্রে বুদ্ধিদীপ্ত পদচারণ, সবকিছুই শুধু আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আমি বুঝি, সবই বুঝি, কিন্তু তাতে খুশি হতে পারি না। ওর প্রশংসা করতে পারি না। কারণ যে মুহূর্তে আমি ওর প্রশংসা করবো ঠিক সেই মুহূর্তেই ও আমার উপর থেকে সমস্ত আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। কাজ করার গতি কমিয়ে আনবে। এবং বাবা হিসেবে সেটা আমি কোনোদিনই চাই না।
প্রায় দিনই রাদ ঘরে দেরিতে ফিরে বউয়ের সাথে ঝগড়া বাধায়। বউমা যে আমাকে আগে আগে ঘুমুতে পাঠিয়ে দেয় তার কারণও এটাই। আমি নিজের ঘরে এসে ঘুমুনোর চেষ্টা করি। ঘুমুতে পারি না। যুবক বয়স থেকেই আমার ঘুমের সমস্যা আছে। আর এখন, এই বৃদ্ধ বয়সে ঘুম জিনিসটা তো একেবারেই কেটে গেছে। এমনও রাত যায় যেদিন সম্পূর্ণ রাত কাটিয়ে ভোরে ফজরের আজানের সময় আমার ঘুম আসে। বেশিরভাগ সময় অবশ্য তাও আসে না। সম্পূর্ণ রাত জেগে বসে থেকে সাঁতটা, সাড়ে আটটায় জগিং করে ফিরে এসে তখন ঘুমুতে হয়।
এই যে আমি রাত জেগে বসে থাকি, বসে বসে কি করি আমি? আপনারা শুনলে হাসতে পারেন। আমি বসে বসে ছেলে আর ছেলের বউয়ের ঝগড়া শুনি। এমনিতে ছেলের গলা খুব বেশি একটা শোনা যায় না ঝগড়ার মাঝে। যদিও ঝগড়াটা সেই বাধায়। কোনো কোনো রাতে ছেলের গলার আওয়াজ অস্বাভাবিক রকমের বেড়ে যায়। কী নিয়ে ওদের ঝগড়া হয়? আমি আচ করতে পারি না। ইচ্ছেও করে না। মাঝে মাঝে ঝগড়া হাত তোলা পর্যন্ত চলে যায়। বউমার তীক্ষ্ণ আওয়াজে আমার বুক ধরফর করে উঠে। তবু আমি ছুটে যেয়ে ছেলেকে থামাতে পারি না। সত্যি বলতে কি, আমার কেমন বাধো বাধো ঠেকে। কি অদ্ভুত কথা, তাই না? নিজের ছেলেকে তার বউকে পেটাতে বারণ করতে বলতে আমার বাধো বাধো ঠেকে! অথচ এই আমি কত অবলীলায় ছোট, বড় কয়েক শত ব্যবসায়ীর জীবন ধ্বংস করেছি! কত অবলীলায় মানুষ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি! হাহ, সেদিনের আমি যুবক ছিলাম। আর এখন? এখনের আমি বৃদ্ধ। বৃদ্ধ এবং মানসিকভাবে দুর্বল।
আগে কখনো আমার রাগ হত না। এখন মাঝে মাঝে হয়। রাগ হয় ছেলের বউয়ের উপর। এরকম একটা শিক্ষিত মেয়ে কি করে পড়ে পড়ে মার খায়! আবার, সেই একই রাতে যে মারছে তার কাছেই শরীর সপে দেয়! আমি কিছুতেই বুঝে পাই না। আমার কষ্ট লাগে। কিন্তু এই কষ্ট পাওয়ার জন্য কাওকে দোষও দিতে পারি না। কারণ, এই বাহাত্তর বছরের স্বল্প দৈর্ঘ্য জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন আমার প্রায়শই মনে হয়, এই পৃথিবীতে একমাত্র নিজের চোখে দোষী বাদে আর কেউই দোষী নয়। প্রত্যেকেই নিজ জায়গা থেকে যা করা প্রয়োজন তা করছে। আর এর জন্য তাদের প্রভাবিত করছে তাদের সাথেই ঘটে যাওয়া পূর্বের অভিজ্ঞতাগুলো। চাকার মত ঘুরছে এই দোষ আর দোষে দোষীকরণের এই অত্যাবশ্যকীয় খেলা।
বেলাশেষে প্রজ্ঞার উপর আমার কোনো রাগ নেই। ওর জন্য যা ভালো ছিলো ও তাই করেছে। ওর কারো একজনের মনোযোগের প্রয়োজন ছিলো, ও সেটার উদ্দেশ্যেই ছেলে, সংসার ছেড়ে দূরে হারিয়ে গেছে। বাস্তবিকই আমি তখন ওকে তেমন একটা সময় দিতে পারতাম না। ব্যবসা আর ঘর, দুটোতেই সমানভাবে সময় দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলো না।
আমার ছেলে, রাদ, ওর উপরেও আমার কোনো রাগ নেই। রাগ থাকাটা সমীচীনও নয়। পরিস্থিতি ওকে ওর মত করে গড়েছে। এখন ও পরিপূর্ণ মানুষ। এখন আর ওকে পরিবর্তনের তেমন কোনো সুযোগ নেই। কাউকে ভালোবাসলে হয়তো ওর ভেতরের হতাশাটুকু কমতে পারে। হতাশা কমলে অত্যাচারও কমবে। কিন্তু আমার মনে হয় না ও কাউকে ভালোবাসতে পারবে। ওর মত, আমার মতরা কাওকে ভালোবাসতে পারে না।
আমার বউমা, এই মেয়েটির উপরেও আমার কোনো রাগ থাকা উচিত না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শুধু এর উপরেই আমার রাগের অনুভূতিটুকু কাজ করে। কাওকে স্নেহ না করলে তার উপর রাগ করা যায় না। এই মেয়েটিকে বোধহয় আমি একটু একটু স্নেহ করি। যে টান নিজের ছেলের প্রতি কখনো অনুভূত হয় নি, সে টান অল্প করে হলেও আমি এই মেয়েটির প্রতি অনুভব করি। কেন করি? আমি নিজেকে বেশ কবার এই প্রশ্নটা করেছি। খুব সম্ভবত এই মেয়েটির সন্তান সুলভ উষ্ণতা আমার এই বৃদ্ধ বয়সের দুর্বল অনুভূতিকে নাড়া দিতে সক্ষম হয়েছে।
মেয়েটিকে যখন মারধর করা হয় তখন আমি নিজের ঘরে খাটে শুয়ে শুয়ে একদৃষ্টিতে পাশের টেবিলে রাখা পানির জগের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমার মাথার রগ দপদপ করতে শুরু করে। কিন্তু কিছুই করার থাকে না তখন। বাঘের বাচ্চা ছোট থাকতেই পোষ মানাতে হয়, বড় হলে ওটা আর কথা শুনে না। আমার ছেলেও শুনবে না। এসব আমি জানি।
জেনে জেনে আফসোস করি। তারপর দুপুর বেলা নিয়ম করে ঘুমাই।
2nd Love Story is given below. If you like, read this also.
চোরাবালি
লিখেছেন: অনামিকা ইসলাম (অন্তরা)
হসপিটালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে আমার প্রথম ভালোবাসার মানুষ, আমার অবহেলিতা স্ত্রী মায়া। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম ওকে। হ্যাঁ, ভালোবেসেই বটে!
শুরুটা হয়েছিল ২০১১সালের এপ্রিলে। মায়া সাহিত্যের নবদিগন্ত আলো ছড়িয়ে পথ চলা এক কিংবদন্তি তরুণী। যার লেখা পড়লে যেকোনো যুবক প্রেমে পরার স্বপ্ন দেখবে।
মন খারাপের কোনো এক দিনে মায়ার লেখা পড়ে ওর লেখার প্রেমে পরে যাই আমি। আমাদের মধ্যে ভালো একটা ফ্রেন্ডশিপ হয়। তারপর ভালো লাগা, ভালোবাসা। কখনো ভাবিনি, ভালোবাসার ব্যাপারে এত সিরিয়াস হব। এত ভালোবাসব ওকে। কখনো প্রেম করব, এটা মাথায়ই ছিল না। ঝগড়া করা আমার মোটেও ভালো লাগত না। কিন্তু ও ঝগড়া করত বেশি। সামান্য ব্যাপারেও অনেক রাগারাগি করত, অভিমান করত। আমাকে বকা দিত। বিষয়টা আমার খুব বিরক্ত লাগত। ভাবতাম, ব্রেক করব। পরে নিজেই থাকতে পারতাম না।
আমাদের রিলেশনের ১বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। এর মধ্যে মায়াকে একবারও দেখিনি। এ নিয়ে বন্ধু বান্ধবরা অনেক হাসাহাসি করত। আমার রাগ উঠে যায়। সেদিন সামান্য পিকের জন্য আমি মায়ার সাথে একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করে ফেলি। পরিষ্কার বাক্যে জানিয়ে দেই-
" হয় পিকচার, না হয় ব্রেকআপ....."
সেদিন রাত্রে মায়া আমায় ছবি দেয়। ছবি দেখে আমি তো মুগ্ধ, যতটুকু না ভেবেছি তার থেকেও অনেক বেশী সুন্দরী ছিল ছবির মেয়েটি। আমাদের ভালোবাসাটা ভালোই চলছিল।
তারপর এলো সেদিন। যেদিন আমি মায়াকে প্রথম দেখি। সাদা কলেজ ড্রেস পরিহিত মায়া যখন আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে কলেজ গেইট দিয়ে বের হচ্ছিল তখন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল আমার। আমি হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। মায়ার প্রতি এতদিনের যে বিশ্বাস ছিল তা নিমিষেই ভেঙ্গে চূরমার হয়ে গেল। মায়ার দেয়া সেদিনের সেই ছবির সাথে আজকের এই মায়ার কোনো মিল নেই। মনে কষ্ট পেলাম, কিন্তু প্রকাশ করলাম না। মায়ার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরলাম।
জানি না, কোন সে কারণে সেদিনের পর থেকে মায়ার প্রতি আকর্ষণটা আমার একটু একটু করে কমতে থাকে। যে মায়ার সাথে একমুহূর্ত কথা না বলে থাকতে পারতাম না, সেই মায়াকে একটু একটু করে আমি এড়িয়ে যেতে থাকলাম। কারণে অকারনে মায়ার সাথে রাগ দেখাতাম।
মায়া হয়তো বুঝতে পেরেছিল আমার জীবনে ওর প্রয়োজনটা ফুরিয়ে গেছে কিংবা ওর প্রতি আমার কোনো টান নেই। আর সে কারণেই হয়তো প্রায় কল করে চুপচাপ আমার হ্যালো বলাটা শুনতো নতুবা খুব করে কাঁদতো।
এভাবে একটু একটু করে আমি মায়ার জীবন থেকে সরে যায়, অনেক দুরে সরে যায়। চেঞ্জ করে ফেলি ফোন নাম্বার, ফেসবুকেও ব্লক করে দেই ওকে।
কিন্তু ভাগ্যের লিখন, না যায় খন্ডন। যে মায়াকে মিথ্যে পিকচার দেয়ার জন্য একটু একটু করে এভাবে দুরে সরে আসা, কাকতালীয় ভাবে সেই মায়ার সাথে পারিবারিক ভাবে আমার বিয়ে ঠিক হয়। মায়া দেখতে খুব বেশী মন্দ ছিল না, গায়ের রঙটা চাপা, তবুও এভাবে মিথ্যে পিক দেয়াটা মেনে নিতে পারিনি....
এরপর বেশ কিছুদিন এগিয়েছে। মায়াও বুঝে গিয়েছিল আমার থেকে ভালোবাসা পাওয়ার আশা নেই। সে বিশেষ কিছু বলত না। সকাল সন্ধ্যে রান্না করত, কাজ শেষে বাসায় ফিরলে খাবার এগিয়ে দিত। স্ত্রী হিসেবে এটুকুই ছিল ওর অধিকার। একসাথে শুতাম না, কারণটা ও আমায় মিথ্যে বলেছে।
প্রত্যেকটা সকালে আমি যখন চেম্বারের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম,
তখন ও দৌঁড়ে বারান্দায় যেত। বারান্দার গ্রিল ধরে কেমন যেন উদাস দৃষ্টি মেলে আমার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকত। আমি যখন বাসায় আসতাম তখনো সাথে সাথেই দরজা খুলে দিত, মনে হতো যেত যেন এতক্ষণ আমারই প্রতিক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল।
আমি যখন গোসল করে,
গায়ে তোয়ালে জড়িয়ে রুমে আসতাম, তখন কেমন যেন ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকত। হয়তো আমার মুখ থেকে অপ্রত্যাশিত কিছু শুনার জন্য'ই এভাবে চেয়ে থাকা।
এভাবেই চলছিল দিনগুলো। কোনো এক কারণে একদিন চেম্বার থেকে একটু তাড়াতাড়ি'ই বাসায় ফিরি। দরজাটা খুলায় ছিল। ভিতরে ঢুকলাম। পাশের রুম থেকে একটা চাঁপা কান্নার আওয়াজ আসছিল। কি হচ্ছে দেখার জন্য পা বাড়াতেই দেখলাম আমার মায়া বিছানায় শুয়ে আমার ফ্রেমে বন্দি ছবিটাকে বুকে আঁকড়ে ধরে কান্না করছে আর বলছে___
" আমি চাইনি বাঁধন, আমি চাইনি তোমায় ঠকাতে। আবার নিজের ছবি দেয়ারও সাহস পাইনি। ভয় হচ্ছিল বাঁধন, আমাকে দেখার পর যদি হারিয়ে যায় ভালোবাসার এই তীব্রতাটুকু।"
তাই আমি তোমায় মিথ্যে ছবি দিয়েছি। আমায় শাস্তি দাও বাঁধন, কঠিন শাস্তি। তবুও এভাবে দুরে সরিয়ে রেখো না। আমার যে বড্ড কষ্ট হয় বাঁধন। বুকে জায়গা না দাও, অন্তত পায়ের কাছে একটু জায়গা দাও। ছবি বুকে জড়িয়ে করুণ স্বরে আর্তনাদ করছিল মায়া। সেটা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, ইচ্ছে হচ্ছিল ওকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু এতদিন যা করিনি, সেদিনও তা আবেগের বশে করতে চাইলাম না।
কেটে গেল চার বছর। গতমাসে একবার মায়ার খুব জ্বর হয়। সেদিনই প্রথম ওকে বলেছিলাম রাতে আমার পাশে শুতে। মাথায় জলপট্টিও লাগিয়ে দিয়েছিলাম। ও আমার হাত দুটো জাপটে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিল। পরদিন মায়াকে ডাক্তারের কাছে নিলাম। ডাক্তারের টেস্টে ধরা পরল মায়ার ব্লাড ক্যানসার হয়েছে। লাস্ট স্টেজ। মায়াকে একটা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করালাম। প্রথমবার আল্লাহর কাছে খুব কেঁদেছিলাম। বলেছিলাম একটা সুযোগ দিতে সব ভুল শুধরে নেবার।
হঠাৎ ডাক্তারের ডাকে চমক ভাঙল। এগিয়ে গেলাম মায়ার বেডের দিকে। ওর পাশে বসে মাথায় হাত রাখলাম। মায়া জল ছলছল চোখে আমার হাতটা চেপে ধরে বলল, "ইহকালে না হোক, পরকালে আমায় ভালোবাসবেন তো?" আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না। মায়া বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললাম। বললাম, " ক্ষমা করে দাও মায়া। একটু সুযোগ দাও, খুব ভালোবাসব তোমায়। এভাবে ছেড়ে যেও না।"
মায়া কোনো উত্তর দিল না, চোখের পাতাও ফেলল না। শুধু চোখের কোণ দিয়ে দু'ফোঁটা জল গড়িয়ে পরল। এতদিন যে কথাটি সে মুখ ফুটে বলতে পারেনি, আজও পারল না। মায়া হারিয়ে গেল ভালোবাসার চোরাবালিতে। শুধু হারিয়ে যাবার আগে শিখিয়ে গেল ভালোবাসার আসল মানে...
Thanks for reading. If you like our Bangla Sad Story, please comment and share this Bangla Love Story with your friends.
No comments:
Post a Comment