Bangla Short Story for Lovers. Here you can find 5 awesome Bangla Story and you can share this with anyone.
গল্প - ০১
প্রথা স্বরুপ উপহার
নীল
পাত্র পক্ষের সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে মলিনা। সবাই দেখছে আর নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে। একজন ঠিকানা লিখতে বলায় ঠিকানা লিখছে মলিনা। ঠিকানা লিখতে খুব কষ্ট হচ্ছে মাত্র টু পর্যন্ত লেখা পড়া করে ঠিকানা লেখাটা অনেক কঠিন। তবু লিখছে তার মত করে, এতুটুকু বোধ নেই তার লেখা কেউ বুঝবে কিনা। লিখে যাচ্ছে তার আপন মনে।
একজন উঠে এসে তার হাত পা চুল খুটিয়ে খুটিয়ে দেখল। রেখা আড়াল থেকে দেখছে কত সময় ধরে যত্ন করে চুলগুলো বেঁধে দিয়েছিলো এরা এক মূহুর্তে খুলে ফেলল। মনের মধ্যে খুব রাগ হচ্ছিলো তবু কিছু বলার নেই। পাত্রী পক্ষদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। যত কম কথা বলে মানিয়ে নেওয়া যায় তাতেই মঙ্গল। এটাই এখন নিয়ম হয়েগেছে। গরু কেনার মত খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে একজন মলিনাকে ভিতরে যেতে বললো। মলিনা খাতার এক কোনা ছিড়ে ঠিকানা দিয়ে ভিতরে চলে আসলো।
'
রেখার মন অনেক খুশি ছিলো আজ, অনেক যত্ন করে সাজিয়ে দিয়েছে বোনকে। গায়ের কালো রং পাউডার দিয়ে ঢেকে দিয়েছে। মনে মনে ভেবে ছিল কালো রংটা কারো নজরে আসবেনা।
বোন কে দেখার আসরে রেখা নিজে থেকেই যায় না এর আগে অনেক বার পাত্র পক্ষ মলিনার বদলে রেখাকে পছন্দ করেছে এজন্য আর সামনে যায় না রেখা।
--বুবু ঠিকানা লিখেছিলে?
--- হুম লিখে দিয়ে আসছিত।
রেখা খাতাটা হাতে নিয়ে লক্ষ করলো ঠিকানা খাতাতেই রয়ে গেছে।
---বুবু তুমি এটা কি করেছো? ঠিকানা তো খাতাতেই রয়ে গেছে।
--আমাকে তুই বলেছিলি ঠিকানা লিখে খাতার এক কোণা ছিড়ে দিয়ে আসতে আমি তাই করেছি। এখানে আমার কি দোষ!
'
রেখার মনে ক্ষীণ আশাটা দপ করে নিভে যায়। পাত্র পক্ষ এবারও বুবুকে পছন্দ করবেনা। এবারও মোটা অংকের পণ চেয়ে বিয়েটা ভেঙ্গে দেবে।
বাবার টাকা দেওয়ার সাধ্য নেই। তাই বিয়েটাও আর হবেনা। নানান ভাবনার অবসান হয় বাবার দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনে।
'
--বাবা কি বললো ওরা?
---ওরা আর কি বলবে মেয়ের সুখের জন্য ঘর সাজিয়ে দিতে হবে ছেলের ব্যবসায় টাকার যোগান দিতে হবে নগদ ষাট হাজার টাকা। এতো টাকা কই পাবো আমি।
----এবারও বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো। বাবা আমাকেই কিছু একটা করতে হবে ।
---কি করবি তুই?
---চাকরী খুজবো, যতদিন চাকরী না পায় ততদিন টিউশনি করবো। তুমি না করোনা বাবা।
'
জমির মিঞা নিঃশব্দে চোখের কোনে লেগে থাকা পানি হাতের অপর পিঠে মুছে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায়। এতদিন মেয়েকে চাকরি করতে দেয়নি আজ কিছু বলতে গিয়েও গলার স্বর আটকে গেলো। তাই নিরবে চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
মলিনা ঘরের কোণে চুপ করে বসে আছে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
'
--বুবু তুই কাঁদছিস? আমিতো আছি এখনো কিছু শেষ হয়ে যায়নি।
--- না আমার বিয়ের দরকার নেই। তোর চাকরি করতে হবেনা। আমার মত মোটা, কালো, মাথায় বুদ্ধি নাই এমন মেয়েকে কে বিয়ে করবে। তার চেয়ে বাবাকে বলবো তোকে বিয়ে দিয়ে দিতে। তুই দেখতে অনেক সুন্দর তোর পণ ছাড়াই বিয়ে হয়ে যাবে।
'
রেখা বোনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আর ভাবছে। বুকের ভিতরে কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে, একবুক কষ্ট এলোপাথাড়ি ভাবে আঘাত করছে , এই বোনটায় আমাকে মায়ের অভাব ভুলিয়ে রেখেছে মায়ের আদরে আমাকে বড় করেছে। কে বলে আমার বোনটা বোকা। আমার বোন সহজ সরল। এ পৃথিবীতে সহজ সরল মানুষ গুলোই বোকা হয়ে থাকে কারণ তারা জানেনা কিভাবে মানুষকে ঠকাতে হয়।
'
----কাঁদিস না বুবু এ পৃথিবীতে তুই আমার সবচেয়ে আপনজন তোর একটু সুখের জন্য আমি সব করতে পারি। আমি জানি তোর সপ্ন একটি সংসারের। তোর স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। আমি তোকে ছোট্ট একটি সংসার দিব। যেখানে তুই রানীর মত সংসার করবি।
'
রেখা বেড়িয়ে পড়ে টিউশনির খোঁজে, আগে যারা পড়াতে বলেছিলো তাদের ওখানে আগে খোঁজ নেয় তারা সবাই অন্যজনকে নিয়ে নিয়েছে। সারাদিন শেষে সন্ধ্যার আগে একজনকে পেয়ে যায় পড়ানো বাবদ মাসে ১ হাজার টাকা করে দিবে। সব ঠিক করে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়।
'
---কিরে বুবু তুই এখানে কেন এই ভর সন্ধ্যায়?
---সেই সকালে বেড়িয়েছিস সন্ধ্যে হয়েগেছে ফিরিসনি ঘরে চুপ করে বসে থাকি কি করে বল ! তাই রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।
---বাবা কোথায় রে বুবু?
---বাবা দোকানের গেছে কিছু জিনিস আনতে।
---চলো ভিতরে যায়। প্রচন্ড খুধা লেগেছে খেতে দাও।
--- তুই হাত মুখ ধুয়ে নে আমি খাবার দিচ্ছি।
'
রেখা খেয়ে চাকরির জন্য ফ্রম পূরণ করতে বসে যায়। কিছুদিন আগে এনেছিলো বাবা করতে দেয়নি জন্য ওভাবেই পড়ে ছিলো আজ কাজে লেগে যাচ্ছে।
'
---কিরে এখনো ঘুমোসনি? তোর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে ভাবলাম সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছিস।
---না বুবু। একটু কাজ ছিলো। এখন তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়বো।
'
দেখতে দেখতে একবছর কেটে গেছে রেখা ভালো চাকরি পেয়েছে। চাকরির পাশাপাশি দুটুো টিউশনিও চালিয়ে যাচ্ছে। আগের মত আর অভাব নেই সচ্ছলতা এসেছে সংসারে। ঘরদুয়ারের পরিবর্তনের সাথে আসবাব পত্রের গায়েও সচ্ছলতার হাওয়া লেগেছে। এখন দেখেই মনে হয় একটি সচ্ছল পরিবার।
'
মলিনার জন্য ভালো সমন্ধ এসেছে। পাত্র পক্ষ মলিনাকে দেখতে এসেছে। আজো রেখা মলিনাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। এখন রেখার কাছে সাজানোর মত সবকিছুই আছে। অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে বোনকে। রেখা বোনের সামনে আয়না ধরে আছে দেখ বুবু তোকে কত সুন্দর লাগছে। মলিনা নিজেকে দেখে যেন চিনতেই পারছেনা। নিজেকে দেখে পরিতৃপ্তির হাসি ঠোঁটের কোণায় ভেসে ওঠে। মনে মনে বলে সত্যি দারুণ সাজিয়েছে রেখা। মলিনা পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে। সবাই তাকিয়ে দেখছে। রেখা আড়াল থেকে সব দেখছে, ওদের চোখ মুখের ভাব দেখ মনে হচ্ছে মলিনাকে ওদের পছন্দ হয়েছে। বয়স্ক একজন বললেন, মা তুমি ভিতরে যাও। একজন বিয়ের দিন তারিখ দেনা পাওনা নিয়ে কথা শুরু করলেন। পাত্রের বাবা বললেন আমাদের কোনো দেনা পাওনা নেই। তবে আপনারা মেয়ের সুখের জন্য যা দেওয়ার দেবেন। ছেলের দোকানে মাল তোলা বাবদ লাখ খানেক দিলেই হবে। যা দিবেন তা আপনার মেয়েরই থাকবে। বিয়ের উপহার স্বরুপ দিবেন আরকি। আমাদের জন্য আমরা কিছুই চায়না। সত্যি কথা বলতে পছন্দ হওয়া না হওয়াতে যায় আসেনা। পণের টাকা দিতে পারবে কিনা এটাই মূখ্য বিষয়। এখন পণের নাম বদলে উপহার হয়েছে এবারের অর্থের অভাব নেই তাই সব দেখে শুনে মলিনার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে যায়। পাত্রকে নগদ এক লক্ষ টাকা দিতে হবে বিয়ের মজলিসে। রেখা টাকার ব্যবস্থা করে রেখেছে আর দুদিন বাদে মলিনার বিয়ে। পাত্রের আগে একবার বিয়ে হয়েছিলো সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে বউটা মারা গেছে। আগের পক্ষের একটি মেয়ে আছে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। বিয়ে ভাঙতে ভাঙতে মলিনার বয়সও আর থেমে নেই। ঠিক বয়সে বিয়ে হলে তারও এমন মেয়ে থাকতো।
'
আজ মলিনার বিয়ে। মলিনার মুখটা বেশ হাসিখুশি তবে মাঝে মাঝেই কালো অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। তার জীবনে দুটো প্রিয় মানুষকে ছেড়ে যেতে হবে এই ভেবে।
---বুবু তোর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটা মাঝে মাঝে দপ করে মিলিয়ে যাচ্ছে কেন? তোর আজকের খুশিটুকু দেখার জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করেছি শুধু আমার বুবুর মুখে একটু হাসি দেখবো বলে।
---নারে অনেক খুশি তবে তোদের ছেড়ে যেতে হবে ভেবে...
----বুবু আর এভাবে বলিসনা । এটাই প্রকৃতির নিয়ম, মেয়েদের এটা মেনে নিতে হয়। তুই ও মেনে নে। মেনে নেওয়ায় উচিত।
---রেখা..
--আর কোনো কথা নয় বুবু। আজকে থেকে তোর নিজের সংসার হবে। তুই অনেক সুখি হবি। এই সমাজে টাকার বিনিময়ে সুখ কেনা যায়। আমি তোকে সুখ কিনে দিবো বুবু।
'
অনেক ভালোভাবে মলিনার বিয়ে হয়েগেলো। মলিনা শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। রেখা পথের দিকে চেয়ে আছে যতদূর গাড়িটা দেখা যায় কিছুক্ষণ পর গাড়িটা মিলিয়ে যায় রেখা বুঝতে পারে গাড়িটা তার দৃষ্টির সীমানার বাইরে বেড়িয়ে গেছে। ধীরে ধীরে সবাই যে যার যার মত বাড়ি ফিরে যায়। রেখা আর জমির মিঞা শূন্য পথের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। রেখা হঠাৎই চিৎকার করে উঠে। এই সভ্য সমাজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। একটি পরিবারের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে তোমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় তবু তোমাদের আপত্তি টাকা ছাড়া মেয়ের অনেক খুত। মেয়ে মোটা, কালো , বুদ্ধিকম আরো কতকিছু এই মেয়েকে বউ করা যায়না। অথচ এই মেয়েকেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘরের বউ করা যায়। এই আধুনিক যুগে এসেও এর থেকে মুক্তি নেই। পণের নাম বদলে উপহারে রুপান্তর হয়েছে এটাই এখন প্রথা হয়ে গেছে। আমাদের সমাজের পক্ষ থেকে এটা এখন প্রথা স্বরূপ উপহার। ধিক এমন সভ্য সমাজকে।
গল্প - ০২
প্রথম দেখাআফসানা তুলি
আচমকাই আমার বিয়েটা ঠিক হয়ে গেল..পাত্রপক্ষ দেখে পছন্দ করে গেছিল..কিন্তু পাত্রকে আমার দেখা হয়নি..মা এসে তার একটা ছবিও দিয়ে গেল হাতে..পড়ার টেবিলে ছবি খানা উপুড় করে রেখে দিয়েছিলাম..ছেলেবেলায় পুতুল যেভাবে সাজিয়ে বিয়ে দেয় ঠিক সেভাবেই সবকিছু এগোচ্ছিল..কোন কিছু তেই যেন মন নেই,সবাই যেটা করতে বলে মুখ বুজে চুপচাপ করে চলে যাই..মা বুঝতে পেরে,মুখের দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে,কিছু বলে না..
আগের দিন রাতে বিয়ের মেহেদি ধুয়ে শেষবার একটা নাম্বারে কল দিলাম..ধরলো না কেউ..
ছোট্ট একটা message পাঠালাম,"ভয় নেই,আর সাহস জুটাতে হবে না..কাল আমার বিয়ে,দোয়া করো.." কোন রিপ্লাই আসলো না সারা রাত..
বিয়ের দিন যখন কবুল পড়ার সময় এলো,পুরো দেহ যেন আমার অসাড় হয়ে গেল..ভেতরে চিৎকার দিয়ে উঠছিলাম,কিন্তু কোন আওয়াজ আসছিল না..কবুল পড়ার পর,হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম..
বিদায় নিয়ে চললাম নতুন বাড়িতে,তখনো তাকে আমার দেখা হয়নি..সব পর্ব শেষ করে যখন ঘরে আসলেন তিনি.আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছিল,অথচ প্রচণ্ড ঘামছিলাম..এক মুহুর্তে মনে হলো ঘর থেকে ছুটে বের হয়ে যায়..এসব ঘোরের ভেতর হঠাৎ কানে আসলো দরদ ভরা কণ্ঠ আমাকে বলছে,"নতুন বৌয়ের বুঝি গরমে অনেক কষ্ট হচ্ছে.."আমি একটু অবাক হয়ে মাথা নাড়ালাম উঁহু... উনি হুট করে দরজা খুলে বাইরে থেকে একটা হাত পাখা এনে আমাকে বাতাস দিতে লেগে গেলেন।আমার মোটেও ভালো লাগছিল না..কিছুক্ষন চুপ থাকার পর উনি বলে উঠলেন,"মনের ভেতর যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে সেটাতে আমাকেউ সামিল কর,নির্দিধায় তোমার মনের লুকানো কষ্ট গুলো আমি জানতে চাই।কথা দিচ্ছি আমি তোমায় ছেড়ে যাবো না..."
তার এই শেষ কথাতে আমার চোখে পানি চলে এলো..প্রথম বার তার মুখের দিকে তাকালাম।অনেক মায়া নিয়ে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে..হালকা হাসি নিয়ে তার কাধ এগিয়ে বললেন,"এখানে মাথা রেখে তুমি কাঁদতে পারো,কষ্ট কম হবে."
আমি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না,ভাঙা মনের ব্যাথা গুলো মনে করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম তার কাধে মাথা দিয়ে। তিনি একটুও নড়েননি..কান্না থামলো অনেক রাতে..তিনি আমাকে বুঝেছেন এই শান্তি নিয়ে তাকে দেখবো বলে তাকালাম.আমার দিকে মায়া ভরে তাকালেন..আমাদের প্রথম দেখা হলো।তিনি হেসে বললেন,"এই যাহ..নতুন বৌয়ের কাজল লেপ্টে গেছে,লোকে বলবে আমিই সর্বনাশ টা করেছি.."
দুজনেই হেসে উঠলাম..
গল্প - ০৩
অবুঝ ভালোবাসা
রক্তাক্ত বিছানার এক পাশে কিছুটা অবচেতন অবস্থায় পড়ে আছে প্রিয়ন্তী ...!চোখ মেলে তাকাতেও যেন কস্ট হচ্ছে..একটু আগেও যে বিছানাটা বিভিন্ন ফুলে সুন্দর করে সাজানো ছিলো তা এখন তাজা রক্তে লাল হয়ে আছে,ফুল গুলো ফ্লোরে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে..!হ্যা, আজকে প্রিয়ন্তীর বাসর রাত ছিলো......!
একটু পর সুমন বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে প্রিয়ন্তী এখনো সে ভাবেই শুয়ে আছে,কিছুটা রাগ হয় তার..তাই বলে""এত ঢং রেখে এবার যাও,বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হও আমি ঘুমাবো..!"সুমনের কথার মানে প্রিয়ন্তী খুব সহজেই বুঝতে পারে,,তাই পেটে চাপ দিয়ে ধরে সে ওঠে দাড়ায়য়,,ঠিকমতো হাটতেও পারছিলো না,খুড়াতে খুড়াতে বাথরুমে ঢুকে ..!
প্রিয়ন্তীর আসতে দেরী দেখে সুমন ক্ষেপে যায়, তবে প্রিয়ন্তী কে কিছু না বলেই বিছানার চাদর টান দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে, আলমারি থেকে নতুন চাদর বের করে সেটা বিছিয়েই সে শুয়ে পড়ে..!আর প্রিয়ন্তী বাথরুমের ফ্লোরে বসে দু ফোটা চোখের জলে গাল ভিজাচ্ছে..!চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে হলেও সেটা করা যাবে না.....!!
প্রতিটা মেয়েই বিয়ের কথা শুনলে মনে মনে খুব খুশি হয়,আয়নার সামনে দাড়িয়ে বার বার নিজেকে দেখে,,মুচকি হাসে,আবার লজ্জায় লাল হয়ে হাত দিয়ে মুখ ঢাকে...! বাসর রাত টা সবার জন্যই স্পেশাল,বিশেষ করে মেয়েদের জন্য আরো বেশি কারণ এই রাত নিয়ে তাদের মাঝে কৌতুহল,ভয় আর লজ্জা কাজ করে,,মেয়েরা প্লান করতে ভালোবাসে,,বিয়ের আগ থেকেই তারা প্ল্যান করতে থাকে কি দিয়ে কথা শুরু করবে,কি ভাবে কথা বললে স্বামী খুশি হবে,,কি কি গল্প করবে,চাদ দেখবে কি দেখবে না, স্বামী কেমন হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ..!
১ বছর পর...
আজ সুমনের ছোট বোন সুমার বিয়ে ..!পরদিন খবর আসলো সুমা হাসপাতালে ভর্তি..!খবর শুনেই হাসপাতালে প্রাণ পণে ছুটে গেল সুমন,,আই সি ইউ এর সামনে গিয়ে দেখলো সুমার হাসবেন্ড মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে..!ডাক্তার বের হতেই এগিয়ে যায় সুমন..!ডাক্তার জানায়.."অতি জোর আর হিংস্রতার কারনে অনেক সমস্যা হচ্ছে, প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে...,এটাকে ছোট খাটো একটা রেইপ বলা চলে.."ডাক্তারের কথা শুনে ক্ষেপে যায় সুমন, ,সে এগিয়ে এসে সুমার হাসবেন্ড এর কলার ধরে মারার জন্য হাত তুলে,,এই মুহুর্তে প্রিয়ন্তী সুমন কে আটকাতে চেস্টা করে,,যখন কিছুতেই সুমন কে থামানো যাচ্ছিলো না,,প্রিয়ন্তী সুমনকে ধাক্কা দিয়ে বলে.."সেদিন তুমি নিজে করেছিলে মনে আছে...না আমি মনে করিয়ে দিবো..?
প্রিয়ন্তীর এ কথাটা সুমনের কানে তীর হয়ে বিধে যায়,,সে মনে করতে চেস্টা করে সেদিন রাতে সে কি করেছিল..!ওহ হ্য মনে পড়েছে..!সুমনের সাড়া শরীর কাপতে থাকে,,হাত দুটি অবশ হয়ে আসে,,ধপাশ করে ফ্লোরে বসে যায় সে,,,দু চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পরছে...!সে নিজেও তো এমন কিছু একটা করছিল যা আজ তার নিজের বোনের সাথে হয়েছে..!আজ তার বোনের যেমন কস্ট হচ্ছে সেদিন প্রিয়ন্তীরও এমন কস্ট হয়েছিল...!আর ভাবতে পারছে না সে...!!!!লাফ দিয়ে ওঠে প্রিয়ন্তী কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে থাকে "আমি ভুল করেছিলাম আমাকে ক্ষমা করে দাও""...!
সমাজ টা বদলেছে,,বদলেছে দৃস্টি ভংগি,,তার সাথে বদলেছে কিছু মানুষের স্বভাব..!যার বলি হতে হচ্ছে অন্য নিশ্বপাপ মানুষদের .!আমি বলবো না,সব মেয়েই খারাপ বা সব মেয়েই ভালো,.!কিছু খারাপ মেয়েদের জন্য এখন সন্দেহের তীর সব মেয়েদের দিকেই যাচ্ছে..!আর পরীক্ষা করার মাধ্যম তো একটা আছেই,সেটার কথা আর কি বলবো..?
মেয়েদের বলছি,,"যৌবন সারা জীবন থাকবে না,এই মেকাপ আপনার বয়স আটকে রাখতে পারবে না,,কিন্তু সম্মান সেটা মৃত্যুর পরও থেকে যাবে..!তাই ক্ষনিকের আনন্দের জন্য নিজের সম্মান বিসর্জন দিবেন না..!আপনার জন্য না,,অন্তত অন্য মেয়েদের জীবনে কিছুটা আনন্দ এনে দেওয়ার ট্রাই করেন..."!
আর ছেলেদের বলছি.."হাতের আঙুল পাচটা সমান না..!সবাই কে এক পাল্লায় তুলা ঠিক না..!বিশ্বাস হলো যেকোন সম্পর্ক এর প্রথম শর্ত..!সো বিশ্বাস করতে শিখুন..!
If you like this Bangla Short Story, there are more stories here.
গল্প - ০৪
অবুঝ ভালোবাসা
ফারহানের আজকে একটু তাড়াহুরা ,অফিসে খুব জরুরী একটা মিটিং আছে,একটু আগেই যেতে হবে।
জুঁই ফারহানের স্ত্রী,প্রতিদিন খুব ভোরেই ওঠার অভ্যাস,বেশ গোছানো সংসারী মেয়ে। ফারহান ঠিক তার উল্টো,ভীষণ আগোছালো,এইজন্যই বোধ হয় ফারহানের কপালে জুঁই জুটেছিল, ওর সবকিছু গুছিয়ে রাখবে বলে, আর রেখেছেও তাই।
খাবারের ব্যাগটা ফারহানের হাতে দিয়ে জুঁই দরজাটা খুলে দিল,প্রতিদিনই এটা করে ও। আজকে ফারহান কিছু একটা ভুলে গেছে...
তুমি কি কিছু ভুলে গেছ ?
ফারহান অলরেডি দরজার বাইরে চলে গেছে,বললো,কই নাতো,সবইতো নিয়েছি,কেন কিছু ফেলে গেছি?
জুঁই এর চোখ ছলছল করছে,ফারহান বুঝতে পারলো প্রতিদিন অফিস যাবার সময় ও জুঁই এর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে যায়,আজ সেটা একদম ভুলে গেছে। দোষটা ফারহানের না, দোষটা মিটিং এর, সারারাত এই মিটিং নিয়েই চিন্তা করেছে সে,ঘুমাতেও পারেনি ঠিকমত,নতুন ক্লাইন্ট,তাদেরকে কনভেইন্স করার দায়িত্ব পুরোটাই ওর উপর।
ফারহান বললো,ওহ সরি একদম ভুলে গেছি,বলতে বলতেই যখন দরজার ভেতরে পা দেবে তখনি জুঁই মুখের ওপরেই দরজাটা বেশ শব্দ করেই বন্ধ করে দিল।ফারহান দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু জুঁই খুলছে না,কাঁদতে কাঁদতেই বললো, যাও অফিসের বসকে দাও গিয়ে,আমাকে আর দিতে হবে না।
অফিসের বসতো ছেলে,মেয়ে হলে এক কথা ছিল জুঁই,
একদম খারাপ হচ্ছে বলে দিলাম,যাও এখন,ঘরে অনেক কাজ আছে আমার।
ফারহান জানে জুঁই এখন আর দরজা খুলবে না,তাছাড়া দেরিও হয়ে যাচ্ছে, আচ্ছা আসছি তাহলে বলে ফারহান চলে গেল। ফারহানের মনটাও একটু খারাপ হলো,কি করে ভুলে গেল,এতটাই টেনশনে ছিল যে মনেই ছিল না।বিয়ের আট বছর হয়ে গেছে,এই আট বছরে কখনো ভুলে যায়নি, কি জানি আরো কত কি ভুলে যাবে ভবিষ্যতে কে জানে...।
জুঁইয়েরও সারাটা দিন আজ খারাপ যাবে। বড্ড অভিমাণ এই মেয়েটার, আর একটু জেদিও,যখন তখন তেলের মধ্যে বেগুন ছেড়ে দেয়ার মত জ্বলে উঠে আবার ঠান্ডাও হয়ে যায় তাড়াতাড়ি।
ফারহান জানে গাল দুইটা বেলুনের মত ফুলিয়ে রাখবে সারাদিন,একটু পর পরই কাঁদবে, ফোন দিলে ফোনও ধরবে না,সারাদিন অনলাইনও হবে না। ফেরার পর রাগ ভাঙাতে হবে তবে যদি একটু শান্ত হয়। ফোন না ধরলেও আজই ফোনটা বার বারই দিতে হবে, কম করে হলেও ঘন্টায় তিনবার,কারণ আজকে জুঁই বেশি খেয়াল করবে যে কয়বার ফোন দিলাম। অন্যদিন এতবার না দিলেও হয়।
ফারহান চলে যাওয়ার পর ঘরের কাজকর্ম সারলো জুঁই। একটা বই নিয়ে বসলো,কিন্তু আজ আর কিছুই ভালো লাগছে না। আজ আবার অনেকদিন পর বিয়ের পরের দিনগুলার কথা মনে পড়ছে ওর। দারুণ ছিল দিনগুলি। টাকা পয়সা খুব বেশি না থাকলেও ভালবাসার অভাব ছিল না। দুইজনের সংসার, টুনা আর টুনি। জুঁই এর মনে আছে চোখ থেকে কাজল নিয়ে দরজার কাঠে লাগিয়ে দিয়েছিল যাতে কারও নজর না লাগে,কি ছেলেমানুষ ছিল ওরা। দুইজনই আনাড়ি,হবেইতো সংসারতো আর আগে কখনো করেনি। একবার ফারহান বাজারে গিয়ে একটা বড় লাউ কিনে নিয়ে এসেছিল,জুঁই বলেছিল আমরা দুইজন মানুষ এত বড় লাউ দিয়ে কি করবো? ফারহান বললো, ছোট লাউয়ের যা দাম বড় লাউয়েরও তাই দাম,তাই বড়টাই এনেছি। জুঁই লাউ কাটতে গিয়ে দেখে লাউ দিয়ে ডুগডুগি বানানোর সময় হয়ে গেছে।পরে ফারহানকে শিখিয়ে দিয়েছিল সবজি কিনলে যেন ছোট সব্জি কেনে। সব্জি যত ছোট হয় ততই কচি আর খেতে ভাল হয়। এরপর একদিন দেশি পেয়ারার মত ছোট ছোট পেঁপে নিয়ে আসলো,সেটাও খাওয়া গেল না। জুঁই বলেছিল এত ছোট পেঁপে কেন আনলে,এগুলো দিয়ে কি করবো? ফারহান বলেছিল তুমিই তো বললা ছোট সব্জি খেতে ভাল হয়।
হুম বলেছি,তাই বলে পেঁপের বেলায় সেটা খাটে না,পেঁপে একটু বড় হলেই ভালো হয়।
ফারহান তারপর থেকে অনেকদিন আর বাজারের দায়িত্ব নেয়নি,এখন অবশ্য বেশ ভালই বাজার করা শিখে গেছে। ভাবতে ভাবতেই জুঁই হেসে উঠলো,আরও কত শত স্মৃতি আছে এতগুলো বছরে বলে শেষ করা যাবে না।
বিয়ের পর প্রথম দুই বছর ওদের একটু অভাবই ছিল, ওরা কখনো বাইরে খেতে যেত না,খুব একটা ঘুরতেও যেত না,আর গেলেও কাছে ধারে কোথাও, ফুচকা খেয়েই বাসায় চলে আসতো। জুঁই এর ওর বরের কাছে আজীবন ভালবাসা ছাড়া আর কোন চাওয়াই ছিল না। আজও নেই, তাই হয়তো আজ এতো কষ্ট পেয়েছে।
এখন আর ওদের সংসারে অভাব নেই, এখন রান্না করতে ইচ্ছে না হলেই বাইরে খেতে চলে যায়,যখন ইচ্ছে হয় শপিং করে,যদিও বেশির ভাগই ওর মেয়ে আর বরের জন্য,নিজের জন্য খুব কমই কেনাকাটা করে ও। এইসব না হলেও ওর চলবে,কিন্তু ভালবাসাটা না পেলে ওর একদিনও চলবে না।
জুঁই এর মনে পড়ে গেল প্রতিদিন অফিস যাবার আগে ও ফারহানের মাথা আচরে দিত। কই আজতো দেয়নি,অনেকদিন ধরেই তো দেয়না, কবে থেকে দেয়না সেটাওতো ওর মনে পড়ছে না,তার মানে অনেকদিন হয়ে গেছে,এতদিনতো জুঁইয়ের খেয়ালই ছিল না। কিন্তু ফারহানতো বলেনি কখনো, আসলে জুঁই সকালে এত ব্যস্ত থাকে যে ফারহান আর কি বলবে। নাস্তা বানানো, মেয়েকে স্কুলের জন্য রেডি করা, খাওয়ানো,এসবেইতো অনেকটা সময় চলে যায়,অবশ্য ফারহান শুধু একদিন হাসতে হাসতে বলেছিল,চুলের কি অবস্থা কেউ চেয়েও দেখে না,সব যত্ন শুধু মেয়ের। জুঁই সেদিন কথাটার তেমন পাত্তা দেয়নি।পরে এটা নিয়ে আর ভাবেওনি ভুলে গিয়েছিল। এইতো সেদিনইতো বললো, এখনতো শুধু মেয়ের পছন্দ মতই খাবার বানাও,আমার পছন্দের ধার আর কে ধারে...জুঁই বলেছিল এখন এভাবেই খেতে হবে,ওতো সময় কোথায় বলো?
জুঁই সত্যি খুব অবাক হলো,তার মানে ফারহান এগুলো সব খেয়াল করে বুঝতে পারে, কিন্তু কই আমার মত তো এইভাবে অভিমান করে বসে থাকে না। এভাবে রাগও তো করেনা।
জুঁইয়ের খুব রাগ হলো নিজের উপর, কেন সে সকালে এমনটা করলো,ছি খুব খারাপ হয়েছে ব্যাপারটা। ও নিজেওতো কতকিছু ভুলে গেছে কই ফারহানতো এভাবে রিএ্যাক্ট করেনি কখনো। মিটিং আছে টেনশনে ছিল তাই হয়তো ভুলে গিয়েছিল,আর ভুলে যেতেই পারে খুব স্বাভাবিক।
জুঁই ফোনটা সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে রেখেছিল,ফোনটা বের করলো,দেখলো এই তিন চার ঘন্টার মধ্যেই বারটা মিসডকল।
জুঁই ছোট্ট একটা মেসেজ লিখলো....
Sorry
I love u
সঙ্গে সঙ্গেই রিপ্লাই আসলো...
I love u too
গল্প - ০৫
সুখ
ফাতেমা বেলি
বিবাহিত জীবনটা খুব সুন্দর করে কাটানো যায় যদি একজন আরেকজনকে বোঝার চেষ্টাটা থাকে। যদি একটুখানি ছাড় দেবার মনমানসিকতা থাকে। বিয়ের পর আপনার দশদিন বা দশমাস বা দুই তিন বছর যেভাবে যাবে, দশ বছর বার বছর বা পনের বছর পর ঠিক ঐভাবেই যাবে না। কারণ ততদিনে দুইজনের মধ্যেই অনেক দায়িত্ব এসে যায়,ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের চিন্তা এসে যায়। আপনাদের ভালবাসার অনেকটা জায়গাজুরে তখন সন্তানেরা চলে আসে, তখন কিন্তু আপনি আপনার স্বামী অথবা স্ত্রীর চাইতে সন্তানকেই বেশি প্রাধান্য দেবেন,আর এটাই বাস্তব সত্যি।
তাই বলে কি ভালবাসা কমে যায়? মোটেই না বরং বিশ্বাস আর নির্ভরতার জায়গাটা দিন দিন বাড়ে আর ভালবাসাটাও বাড়তে থাকে। আপনি যেমন আপনার স্ত্রীকে ছাড়া একদিনও চলতে পারেন না,আপনার স্ত্রীও তেমনি আপনাকে ছাড়া চোখে অন্ধকার দেখে। হয়তো ভালবাসার প্রকাশটা একটু কমে যায়। কিন্তু ভালবাসাটাতো সেই আগের মতই রয়ে যায়...।
গল্প - ০৬
বিচ্ছেদ
শিহাব আহমেদ
ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা হয়। কিন্তু ভালোবাসা মানেই প্রেম নয়। ভালো লাগা থেকে বিয়ে হয়, আবার বিয়ের পরেও প্রেম হয়। স্বামী-স্ত্রীর প্রেম। আদি এবং অকৃত্রিম প্রেম। অ্যারেঞ্জ ম্যারেজগুলোর ক্ষেত্রে কিন্তু এমনই হয়।
মুসকান! নামটা সুন্দর না! মুসকান আমার প্রেমিকার নাম।
সময়টা ছিলো উদ্ভুত। আমি তখন দেশের বাইরে। ওর সম্মতিতেই আমি পরবাসী হই। বিদেশের মাটি আমাকে কখনোই টানেনি। যদিও মানুষের ইচ্ছা, অনিচ্ছা, পছন্দ, অপছন্দ, সিদ্ধান্ত সবসময় এক স্থানে স্থির থাকে না ----- বদলায়। আমার যতোটা না ইচ্ছে ছিলো তারচে' অনেক বেশি ইচ্ছে ছিলো মুসকানের। ওকে খুশি করতে, আমাদের ভবিষ্যৎ স্বচ্ছলতার কথা ভেবে আমি যেতে রাজী হই। কে চায় মনের মানুষকে ছেড়ে পরবাসী জীবনযাপন করতে!
হঠাৎ মুসকানের মা-বাবা ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেন। হঠাৎ মানে একেবারেই হঠাৎ -----বিনামেঘে বজ্রপাত আর কি!
মুসকান সেই বিয়েতে রাজী ছিলো না। রাজী হবে কেনো? ও যে আমাকে ভালোবাসে! ভালোবাসাকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে প্রেমিক-প্রেমিকার দু'জনেরই যে অপমান হবে। মানব জীবনে প্রেম যতোটা জরুরী, ঠিক ততোটাই জরুরী সঠিক মর্যাদায় প্রেমকে প্রতিষ্ঠিত করা।
আমাদের অধিকাংশ মা-বাবার মধ্যে উদ্ভুত একটা ভাবনা কাজ করে। মেয়ে যদি ছেলেকে নিজে পছন্দ করে বা ভালোবাসে, তাহলে মা-বাবা তাকে অযোগ্য মনে করেন। ছেলেদের অভিভাবকদের বেলায়ও এমন হয়। হ্যাঁ, ছেলে-মেয়েদের নিজ পছন্দের মানুষ ভুল হতেই পারে। কখনো কখনো হয়ও। স্বাভাবিক। আমরা মানুষকে চিনি তার কর্মে, ব্যাবহারে। মনে কি চলছে সে নিজে জানে। মনের মতলব কেউ যদি আড়াল করতে চায় তাহলে সে খুব সহজেই করতে পারে। কাজেই মানুষ চেনায় আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। এমন কি মা-বাবাও না। তাঁরা ছেলের জন্য পাত্রী, মেয়ের জন্য যে পাত্র পছন্দ করেন তার সবটাই কি সঠিক হয়?
আমি যতোটুকু জানতাম মুসকানের মা-বাবা আমাকে পছন্দই করতেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অযোগ্য ভাবতেন তা জানতাম না। পছন্দ মানে তো যোগ্যতা নয়! হয়তো ঠিকই পছন্দ করতেন, কিন্তু মেয়ের জামাই হিসাবে যোগ্য ভাবতেন না। ভাবতেন না বলেই মেয়েকে বন্দী করে রাখেন। যাতে মুসকান কোনোভাবেই আমার সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।
মুসকানের কথাবার্তা, চলাফেরা অনেক সাধারণ। দেখতেও বেশ মায়াবী, সরল। মায়ার আড়ালে অনেক সময় ছলনা থাকে। সরলতার আড়ালে থাকে জটিলতা। আর ওকে বন্দিনী বানিয়ে রাখা ওতো সহজ ছিলো না। চাচাতো বোনের সাহায্য নিয়ে সে ঠিকই পালিয়ে যায় বাড়ী থেকে এবং নিজের ভালোলাগার পাত্রকে বিয়ে করে। না, সে পাত্র আমি নই।
বিয়ের পরের দিনই আমার ভাবী ফোন দিয়ে সব আমাকে জানায়। মুসকান বিয়ে করেছে ইমনকে। আমি, মুসকান, ইমন একই পাড়ার ছেলে-মেয়ে। বহুদিন মুসকানের পিছনে ঘুরেছে ইমন, কিন্তু পাত্তা পায়নি। সঠিক সময়ে পাত্তা পেয়ে ইমনের পূর্বের পাত্তা না পাওয়ার দুঃখ হয়তো ঘুচে গেছে!
প্রাক্তন প্রেমিকা আমাকে ফোন দেয় বিয়ের সাতদিন পরে। খুব বিষণ্ণ কন্ঠে আমাকে জানায় তার অসহায়ত্বের কাহিনী। তার নাকি মাথা ঠিক ছিলো না। বুঝে উঠতে পারছিলো না কি করবে না করবে। তাই নিরুপায় হয়ে ইমনকে বিয়ে করেছে।
আমাকে দেখতেও যতো বোকা মনে হয়, আসলে আমি ওতোটা বোকা নই। ওর অসহায়ত্বের কাহিনী শুনে আমার কিছু বলার ছিলো না। তবু তো কিছু বলতে হয়!
তাই বলি ----- "যা করেছো ঠিকই করেছো। ওমন অবস্থায় তোমার কিবা আর করার ছিলো। যাই হোক, বাদ দাও ওসব। যা হবার হয়েছে। এখন জমিয়ে সংসার করো।"
আসল কাহিনী তো আমি জানি। মুসকান জেনে-বুঝে ঠান্ডা মাথায় আমার স্বপ্নগুলোকে খুন করেছে। ইমনের বাড়ী থেকে আমার বাড়ীর দুরত্ব মাত্র এক কিলো। ও ইচ্ছে করলেই আমাদের বাড়ীতে যেতে পারতো। আমাদের পরিবারের সবাই ওর আর আমার ব্যাপারটা জানে। আর আমি আমি তো ফিরতামই ছয়-সাত ঘন্টার মধ্যে। এই পরবাস থেকে মুসকানের সামনে উপস্থিত হতে কতো সময় লাগতো? বড়জোর ছয়-সাত ঘন্টা। মুখ্য সমস্যা ওটা নয়। মুখ্য সমস্যা হলো ------ ইচ্ছা। ইচ্ছে যদি আন্তরিক হয়, অসম্ভবও অনেক সময় সম্ভব হয়। আর এ তো সম্ভাব্য ছিলো। আসলে মুসকানের ইচ্ছে ছিলো না।
মুসকানের মতো অনেকে ছেলে-মেয়েই হয়তো আমাদের চারপাশে আছে। যারা প্রেমিক, প্রেমিকার স্বীকৃতি দিচ্ছে একজনকে, মনে মনে লালন করছে আরেকজনকে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রেও এমনটি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়। দিব্যি হাসিমুখে আপনার সাথে সংসার করছেন, আপনার বুকে মাথা রেখে নিজের ভালোবাসার গভীরতার প্রমাণ দিচ্ছেন। অথচ মনে মনে অন্য কাউকে লালন করছেন। সকলের অগোচরে তার কথা মনে করে হয়তো অশ্রুও ফেলছেন! হতেই পারে এমন। অন্তত হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। ভাগ্যিস মানুষ মানুষের মনের গভীরে যেতে পারে না। যদি পারতো তাহলে তো মহা সর্বনাশ হয়ে যেতো!
Thanks for reading our blog Bangla Talkies. If you have any suggestion for this blog. Please contact us.
গল্প - ০৭
শহর আমার একলা শহর
অহনা
আমি হঠাৎ করে খেয়াল করলাম, বাহিরে প্রচন্ড বৃষ্টি। আমার পাশে নওশীন বসে বসে আলু নামে একটা
চিপস খাচ্ছে। আমি নওশীনকে বললাম, “বাহিরে বৃষ্টি”।
নওশীন আমার দিকে তাকালোই না। আমি আবার বললাম, “বাহিরে বৃষ্টি হয়”।
নওশীন একটু বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমাকে বলছো?”
আমি মাথা নাড়িয়ে বললাম, “নাহ, যাই!”
আমি যাওয়ার কথা বলেও ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। গ্যালারী থেকে বের হতে ইচ্ছা করছেনা।
আজ বৃষ্টির দিন, অলস কবির কবিতার খাতা ফুরিয়ে যাবার দিন। আমি কি কবিতা লিখতে পারি?
জানিনা, কাউকে কখনও পড়ে শোনাইনি। আমার নওশীনকে খুব কবিতা পড়ে শোনানোর ইচ্ছা। কিন্তু কোন
এক কারণে নওশীন সবসময় আমার উপর বিরক্ত হয়ে থাকে। আমি একদিন সময় করে ওকে জিজ্ঞেস করবো
ভাবছি। আচ্ছা আজ জিজ্ঞাসা করা যায়না?
“নওশীন, তুমি আমার প্রতি কি একটু বিরক্ত?”
নওশীন একটা বই পড়ছিলো। Amazon and its Eco। বইটা পড়তে পড়তে সে আমাকে খুব বিমর্ষ কন্ঠে বললো,
“কেন এমন মনে হলো?”
আমি মাথায় হাত দিয়ে চুল আচড়াতে আচড়াতে বললাম, “আমি তোমাকে গত কয়েকদিন ধরে ফোন করলে
তুমি ফোন ধরোনা। কথা বলতে চাওনা। আমার দিকে তাকাওনা। আমার গা দিয়ে কি বাজে গন্ধ আসে
যে তুমি আমাকে এতো অপছন্দ করো?”
নওশীন আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো, “এইতো ধরতে পেরেছো। তোমার গা দিয়ে শুটকি মাছের
গন্ধ পাই শুধু। তুমি কক্সবাজারের লোক তো, তাই যখনই আমি তোমার আশেপাশে যাই লইট্যা আর নূনা
ইলিশের গন্ধ পাই। তুমি আজকে হলে যেয়ে ক্যামেলিয়া সাবান দিয়ে গোসল করবে”।
আমি ওর পাশে বসে বললাম, “আজকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। খেয়াল করছো, বৃষ্টির পানি কিন্তু একদম ঠান্ডা
না”।
নওশীন আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আমি তোমাকে টাকা দিচ্ছি। তুমি একটা সাবান কিনে এনে এই
বৃষ্টিতেই লুঙ্গি কাছা মেরে গোসলটা সেরে ফেলো”।
আমি হেসে বললাম, “দাও টাকা দাও। সকালে খাওয়া দাওয়া করা হয়নি। মাস শেষ, টাকাও শেষ”।
নওশীন আমার হাত ধরে বললো, “চলো”।
আমি যখন খাচ্ছি তখন নওশীন অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানিটা আড়াল করতে পারলোনা। আমার
খুব ক্ষুধা লেগেছিলো, তাই দুই হাতেই খাচ্ছিলাম বলা চলে। নওশীন আমার দিকে একটু তাকায় আর
মুখ লুকিয়ে হাসে। হাসির সাথে ওর চোখে পানি দেখতে কি ভয়ংকর সুন্দর লাগছে আমি তা তাকে
বোঝাতে পারবোনা।খাওয়া শেষ করে আমি নওশীনের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
কাল রাতেও খাওয়া হয়নি”।
নওশীন বিরক্ত হয়ে বললো, “তুমি একটা টিউশনী করোনা কেন?”
আমি কিছু বললাম না। শুধু মাথা ঝাকালাম। ওকে বোঝাতে চাইলাম আমার হয়না। আমার দ্বারা
কেন যেন টাকার জন্য কাউকে পড়ানো ব্যাপারটা হয়না।নিজেকে কেমন ছোটলোক লাগে। আমি অবশ্য
মাঝে মাঝে আমাদের ছোট্ট সমুদ্র শহরে বাচ্চাদের পড়াতাম। আমার বাবা তখন সরকারী চাকরী
করতেন। প্রতিদিন হাতে করে বড় বড় মাছ নিয়ে আসতেন। জেলেরা বাবাকে খুব পছন্দ করতো। মহাজন কিছু
জানবার আগেই বাবাকে সবচেয়ে ভালো আর টাটকা মাছগুলো লুকিয়ে লুকিয়ে দিয়ে দিতো। বাবা তৃতীয়
শ্রেণীর কর্মচারী ছিলেন, অনেক টাকা ছিলোনা। জেলেরা তাই বাবার কাছ থেকে তেমন একটা
টাকাও চাইতোনা।আমার বাবা এখনও চাকরী করেন। তার হাতে এখনও বিরাট বিরাট মাছ থাকে।
কিন্তু কেউ রান্না করার নেই। মা খুব মাছ খেতে পছন্দ করতেন, আর বাবা মাছ রেধে মাকে চমক দিতে।
মা যেদিন চলে গেলেন সেদিন থেকে আর বাবা রান্না করেন না। আমিও আর আগ্রহ করে মাছ খাইনা।
কোনদিন না।
নওশীন আমার সাথে হাটতে হাটতে কার সাথে যেন ফোন করে কথা বলছিলো। ক্লাসের সামনে গেলে
ও আমাকে বললো, “আমার আশেপাশে ঘুরবানা। তোমার জন্য আমি কারো সাথে একটু ভাব
ভালোবাসা করতে পারিনা। সবাই ভাবে আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড, তাই কোন স্মার্ট ছেলে আমার
আশেপাশেও আর ঘুরঘুর করেনা”।
আমি হাসিমুখে বলি, “আচ্ছা।একটা চুইংগাম দাও”।
নওশীন ব্যাগ থেকে একটা বাবল গাম বের করে দিলো। আমি বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
“এটা না। ওইযে ব্যাগের কোণায় একটা মিন্টো ফ্রেস আছে, ওইটা দাও”।
সে খুব বিরক্ত হয়ে আমাকে বললো, “বেশরম। এখন আমার ব্যাগের কোথায় কি আছে তাও খেয়াল রাখো।
আমার উকুন মারার চিরুণীটা পাচ্ছিনা। কোন পকেটে আছে বলো”।
আমি মাথা চুলকিয়ে বললাম, “ওইটা কালকে তোমার থেকে একটু ধার নিছিলাম। আমার মাথায়
তোমার সাথে থাকতে থাকতে কিছু উকুন হইছে। চিরুণীটা দিয়ে উকুন ঝাড়তেছি”।
নওশীন জিহবা বের করে ওয়াক করে বললো, “ভালো করে ধুয়ে নিয়ে আসবা কালকে”।
ক্লাস শেষ করে আমি নওশীনকে বললাম, “কালকে থেকে তো গ্রুপ ভাগ হয়ে যাবে। তুমি কি Power নাকি
Communication নিবে?”
নওশীন মাথা নিচু করে হাটতে হাটতে বলল, “আজকে একটা প্রেমপত্র পেয়েছি। যেই ছেলেটা দিয়েছে, সে
Electronics নেবে। আমিও ওইটাতেই যাবো। তাছাড়া জিপিএ তো ভালো না। এছাড়া উপায় নাই”।
আমি বললাম, “আচ্ছা। তাহলে তো আর ঠিকমত দেখা হবেনা। আমাকে তো মনে হয় Power দেবে”।
নওশীন মুখ ভেংচিয়ে বললো, “তোমার মত ভুয়া স্টুডেন্ট Power পড়ে কি করবে। তোমার জিপিএ তো ভালো
না জানতাম”।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “তা ঠিক। তারপরও এডভাইজার স্যার...”
আমি কথা শেষ করার আগেই নওশীন অনিককে দেখিয়ে বললো, “ওইযে চুল বড় বড় স্মার্ট ছেলেটা ও
আমাকে প্রপোজ করছে। ওর সাথে গত তিন বছরে আমার একবার কি দুইবার মাত্র কথা হয়েছে। তাতেই
কত ফিদা হয়ে গেছে আমার জন্য”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “ছেলেটা ভালো আছে। বাবার অনেক টাকা। তোমাকে অনেক গিফট দেবে”।
নওশীন হেসে বললো, “আমি জানি”।
এরপর একটু থেমে বললো, “তুমি কি বললা? আমি কি গিফটের ভুক্কা। ফাজিল ছেলে তিন বছর ধরে আমার
পিছে ঘুরতেছো, কোনদিন কোন উপলক্ষ্যে আমাকে কোন গিফট দিছো?”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “আগের মাসেই না আমি তোমাকে বাগান থেকে একটা নীল প্রজাপতি ধরে
এনে উপহার দিলাম?”
অনেক রাতে বাবা আমাকে ফোন দিলেন। সব সময়ের মত আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “ভাত খাইছো?
টাকা লাগবে?”
আমি সব সময়ের মত বললাম, “খেয়েছি। টাকা লাগবে। ৫০০ দিলেই চলবে। হাত খালি”।
বাবা বললেন, “ঠিক আছে তোমার পরিচিত ওই দোকানে বিকাশ করে দিবো”।
বাবা এরপর অনেক ক্ষণ ফোন ধরে ছিলেন। আমি জানিনা উনি কিছু আর বলবেন কিনা। ফোনটাও রাখতে
পারছিনা, কিন্তু ফোন রাখা দরকার। প্রকৃতি ডাক দিয়েছে।
বাবা একটু ইতস্তত করে বললেন, “তুমি আসবা কবে আব্বু?”
আমি গম্ভীর মুখে বললাম, “জ্বী আব্বা পরের মাসে সেমিস্টার শেষ হওয়ার পর দুই সপ্তাহ ছুটি পাবো।
তখন আসবো”।
বাবা কিছু আর বললেন না। ফোন রেখে দিলেন। অনেকদিন পর বাবা আমাকে রাতের ভাত আর মাসের
টাকা বাদে আর কিছু বললেন। হয়তো কোন সমস্যা হয়েছে।
এক বছর পর বাবা যখন আচমকা মারা গেলেন তখন জানলাম বাবার লিভারটা পচে গিয়েছিল।
কাউকে জানাননি। আমরা খুব দরিদ্র সমুদ্রপারের মানুষ। সামান্য ৭৭৫৬ টাকা বেতনের চাকরী করে
এমন ভয়ংকর সব অসুখগুলোর চিকিৎসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।
বাবা মারা যাওয়ার তিনদিন পর আমি সৈকত ধরে হাটছিলাম। আমার এক বছরের ছোট বোন সীমা
আমার সাথে হাটছিলো। সীমা খুব ইতস্তত করে বললো, “ভাই তোমাকে জানাতে আব্বা না করে
দিছিলেন।আব্বা বলছিলো তুমি পড়াশোনা না করে তাহলে বাড়ি এসে পড়বা”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “কিছু বলার দরকার নেই সীমা। আমি বুঝতে পারি”।
সীমা আমার দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বললো, “ভাই চলো বাসায় চলো। তোমার জন্য রুটি বানাইছি।
তিনদিন ধরে তুমি কিছু খাওনা”।
আমি সীমার দিকে তাকিয়ে বলি, “তোর কষ্ট লাগেনা আমাদের এতো ভালো বাবাটা আর নাই”।
সীমার চোখ ফেটে পানি বের হয়ে আসে। আমাকে বলে, “কষ্ট লাগে। কিন্তু আমি গত এক বছর ধরে বাবার
কষ্ট দেখতেছি। কতরাত গেছে আমি বাবার পাশে শুয়ে বাবার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম যেন সে একটু
ঘুমাইতে পারে। বাবা যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদতো। ঘুমাইতে পারতোনা। তখন অনেক কষ্ট লাগতো
ভাই। এখন বাবার জন্য শান্তি লাগতেছে। যে যন্ত্রণা সে পাইছে তার থেকে বাবার মুক্তির দরকার
ছিলো। আমার কষ্ট এখন তোমাকে নিয়ে।তুমি আমার সাথে আসো। একটু খাবা, আসো”।
আমি সীমার দিকে তাকিয়ে থাকি। আমাদের ছোট দু ভাইবোনের একটা আলাদা জগৎ গড়ে উঠেছিলো মা
মারা যাওয়ার পর। বাবা মা চলে যাওয়ার পর থেকে আধা পাগল হয়ে গিয়েছিলেন। আমার বোন
আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও তখন আমাকে দেখে শুনে রাখতো। নয় বছরের মেয়েটা এক বছর বড়
ভাইটাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতো ঠিক আমার মা যেমন করে খাইয়ে দিতো। সীমা আমার পাশে রাতে
শুয়ে থাকতো যখন আমি ঘুম ভেঙ্গে কাঁদতাম। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর করতো। আমার আর
ওর বোর্ড পরীক্ষাগুলো একসাথে ছিলো। ও এস.এস.সিতে পুরো ইউনিয়নে একমাত্র টেলেন্টপুলে
স্কলারশীপ পাওয়া মেয়ে ছিলো। আমি ডাব্বা মেরেছিলাম। জিপিএ ফাইভ কোনরকমে। আমি যেদিন
ঢাকার জন্য রওনা দেই তাকে জিজ্ঞাসা করি, “তুই আমার জন্য এইচ.এস.সিতে রেজাল্ট খারাপ
করলি?”
ও মুখ কালো করে বলে, “ভাই আমি ভালো করলে বাবা আমাকে ঢাকায় পড়তে পাঠায় দিতো। আমি
কোথাও যাবোনা বাবাকে রেখে একা। তুই যা ভাই। অনেক পড়বি।আমারটাও পড়ে দিবি”।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে সেদিন অনেক কাঁদছিলাম। এই বোনটাকে আমি কোনদিন বকা দেইনি, মারিনি। ও
আমাকে বকতো মারতো। বেশি রাগ করলে কেদে দিত। আজ যখন বাবাও চলে গেলেন আমাদের রেখে তখন
আমি বুঝলাম এই জগতে আলো আধারে এই একটা মানুষকে আমার সবচেয়ে ভালোবাসা দরকার।
সীমা আমাকে আজকে আবার হাত ধরে রুটি ছিড়ে ছিড়ে খাইয়ে দিচ্ছিলো। ওর চোখ ভরা জল, আমার বুক
ভরা। আমি রুটি খাওয়া বন্ধ করে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমাদের ভালো মানুষ বাপটা অনেক
কষ্ট পাইতো প্রতি রাতে তাইনা। আমি কিচ্ছু করতে পারিনাই। তার জন্য আমি কিচ্ছু করতে পারিনাই।
ঢাকায় বসে আমি শুধু মজা মারছি, একবারও বাপটার কষ্ট বুঝতে পারিনাই। আমার বাবা আমার
কাছ থেকে কিচ্ছু পাইলোনা রে। একটা ভাত নিজের টাকায় কিনে খাওয়াইতে পারলাম। সীমা আমি
এই দুঃখ কই রাখি। আমি এমন অকৃতজ্ঞ সন্তান কিভাবে হলাম? আমার নিজেকে ঘিন্না লাগতেছে”।
সীমা আমাকে জড়ায় ধরে কাদে আর বলে, “ভাই এইসব বইলোনা। বাবার আত্না কষ্ট পাবে। তুমি
বাবারে অনেক দিছো। কয়টা ছেলে আমার ভাইয়ের মত ঢাকায় এতো ভালো জায়াগায় পড়াশোনা
করে, কয়টা ছেলে এমন ইঞ্জিনিয়ার হইছে। ও ভাই, তুমি আর কাইদোনা। বাবা তোমারে নিয়ে অনেক গর্ব
করতো। আমারে সবসময় বলছে তোমারে যেন ঠিকমত দেইখা রাখি। তুমি আমার সোনা ভাই না, আর
কাইদোনা”।
আমি এক মাস পর ঢাকায় ফিরে আসি। আমার মাথায় তখন একটা চাকরির চিন্তা। সীমাকে ঢাকায়
নিয়ে আসতে হবে।কক্সবাজারে ওকে আমার এক দুঃসম্পর্কের খালার বাসায় রেখে আসছি। একা একা
এভাবে ওকে রাখা যাবেনা আর। আমি যখন বিশবিদ্যালয়ে পৌছালাম জানলাম রেজাল্ট হয়ে গেছে
লাস্ট টার্মের। আমাকে নওশীন নিজেই খবরটা দিলো। আমাকে দেখে বললো, “দাড়ি এত বড় রাখছো কেন?
টাকা নাও, একটা রেজর কিনে শেভ করবা। ঠিক আছে?”
আমি ওকে বললাম, “আমাদের একটা টেম্পোরারি সার্টিফিকেট নাকি দিচ্ছে?”
ও মাথা নেড়ে বললো, “রেজিস্টারের অফিসে যাও। ১০০ টাকা লাগবে, আমার থেকে নিয়ে যাও”।
আমি নওশীনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রেজিস্টারের কাছে গেলাম। স্যার আমাকে দেখে বললেন,
“কেমন আছো হাসিব? তোমাকে অনেক খুজেছিলাম। তোমার মোবাইলেও পাওয়া যাচ্ছিলোনা।তুমি যেয়ে
একটু ভিসি স্যারের সাথে দেখা করো”।
আমি একটু ভয় পেয়ে স্যারকে বললাম, “স্যার আমি কি ফেল করছি কোন বিষয়ে?পরীক্ষা তো এতো খারাপ
দেই নাই”।
স্যার হেসে বললো, “ভিসি স্যারের অফিসে যাও। তারপর আমার সাথে দেখা করো। তোমার সার্টিফিকেট
আমি দিয়ে দিবো”।
আমি ভিসি স্যারের অফিসে গেলে দেখলাম উনি জোহরের নামাজ পড়ছেন। নামায শেষে আমাকে দেখতে
পেয়ে বললেন, “ঘরে আসো”।
আমি স্যারের রুমে ঢুকে হাত পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
স্যার নিজে থেকে বললেন, “এখন তো খুব ভয় পাইতেছো, সম্মান দেখাইতেছো। দুই মাস পর যখন লেকচারার
হিসেবে জয়েন করবা তখন তো ভাব দেখাবা, আর আড়ালে যেয়ে বলবা ভিসি ব্যাটা কিচ্ছু জানেনা।
কার্শফের কয়টা ল’ আছে এইটাও বলতে পারবেনা”।
আমি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলাম স্যারের সামনেই। কেউ জানেনা আমি ঢাকায় পকেটে মাত্র
১২৬ টাকা নিয়ে আসছি। আমার বোনের কাছে একটা টাকাও নেই। সরকারী থাকার জায়গাটা
ইতোমধ্যে সরকারী দলের লোক দখল নেয়ার জন্য আমাদের সাথে দেখা করে আমাকে দুটো থাপ্পড় দিয়ে
গেছে। বাবার কবর দেয়ার জন্য সরকার ৪৫৭৮ টাকা দান করেছেন, আর একটা টাকাও পাইনি।
পাবো কিনা তাও জানিনা। আমার মাথার উপর কোন ছাদ ছিলোনা। এমন অবস্থায় একটা চাকরী
কতটা জরুরী তা করুণাময় ছাড়া আর কেউ জানতোনা।
ভিসি স্যার চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আরে বেটা কাদিস কেন? আমার
সবচেয়ে ভালো ছাত্রটা এমন করে কাঁদলে তো সমস্যা। তুই হবি বেটা একদিন বাঘা প্রফেসর। আমার
থেকেও বড় প্রফেসর। দেশ বিদেশ হুঙ্কার দিয়ে স্পিচ দিবি। এভাবে কাদার কি আছে?”
আমি স্যারকে বলি, “স্যার দুইদিন ধরে কিছু খাইনা। বাবা মারা গেছে এক মাস তিনদিন হয়েছে। গ্রামে
আমার বোনটা একা। একটা চাকরী খুব দরকার ছিলো। আপনার পায়ে ধরি, খুব দ্রুত একটা ব্যবস্থা
করে দেন”।
স্যার আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলেন।একসময় বললেন, “যতদিন না চাকরী হয় তুমি হলে থাকবা।
আমার কাছে থেকে টাকা নিয়ে যাও। ঠিকমত খাবা প্রতিদিন। ডিপার্টমেন্টে আমি সুস্থ সবল
ফ্যাকাল্টি দেখতে যাই। এরকম রোগাশোকা লেকচারার প্রয়োজন নাই”।
আমি জোহরের নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে বললাম, “আল্লাহ যেই ফেরেশতাদের দুনিয়াতে
পাঠাইছো আমার মত অভাবীর মুখে পানি দেওয়ার জন্য তাদের আখেরাতে তোমার স্পর্শ পাওয়ার
সৌভাগ্য দিও”।
আমি তিনদিন পরের কক্সবাজারের টিকেট কাটলাম। বাসে যাবো, গাড়ি ছাড়বে রাত ১১:৪৫ এ। টিকেট
কেটে বিকেলে নওশীনের সাথে দেখা করতে গেলাম। এতোদিনের বন্ধু, ওকে কিছুই জানাইনি। পাশ করার
পর ও হয়তো বিয়ে করে দেশের বাহিরে চলে যাবে, আমার পথ হবে আরেক। ঠিকমত বিদায় নেয়া উচিত।
নওশীনের সাথে যখন দেখা করতে গেলাম ও তখন হোটেলে বসে একা একা খাচ্ছে আর কাকে যেন
খুজছে। আমি ভাবলাম সে হয়তো স্মার্টবয় অনিককে খুজছে। আমি তবুও তার পাশে এসে দাড়াললাম। সে
হোটেলের মামাকে ডেকে বললো, “জ্বী এখন ভাত আর মুড়িঘন্ট দেন”।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম, “বুধবার কক্সবাজারে চলে যাচ্ছি আবার। আবার কবে দেখা হবে কে
জানে”।
ও বললো, “কালকেই দেখা হবে। আমার কালকে এনগেজমেন্ট।পাত্রের নাম আশফাক লাভলু। লাভলু
নামটা আমার এত পছন্দ হইছে যে আমি সাথে সাথে পাত্র পছন্দ করে ফেলছি”।
আমি হাসিমুখ বললাম, “বিয়ের পর কি দেশে থাকবে?”
নওশীন একটু চিন্তা করে বললো, “ছেলে এখন লন্ডনে একটা হোটেলে চাকরী করে। আমাকেও হয়তো নিয়ে
যাবে। ছেলের এম.বি.এ শেষ হলে সে ইউ.এস.এ মুভ করবে। সো, আমার দেশে থাকার বা ফিরে আসার
সম্ভাবনা খুব কম”।
আমি নওশীনকে শুভকামনা জানিয়ে পেট ভরে ভাত খেলাম।কতদিন পর ওর সাথে বসে ভাত খেলাম।
আমি খেয়াল করলাম নওশীন আজকে তার চোখের পানি লুকালো না।আমিও তাই সুযোগ পেয়ে জিজ্ঞেস
করে ফেললাম, “নওশীন তুমি প্রতিদিন আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে কাদো কেন?”
নওশীন চোখ মুছতে মুছতে বললো, “তুমি হয়তো জানোনা কিন্তু আমি তোমার সাথে প্রতিদিন দুপুরে ভাত খাই
কেন জানো? আমার খুব মায়া লাগে তোমাকে পেট ভরে খেতে দেখলে। তোমার অর্থনৈতিক অবস্থা আমি
জানি।অনেক রাত তুমি না খেয়ে থাকো। কত সকাল গেছে তুমি খালি পেটে ক্লাস করতে চলে আসছো।
দুপুরে যখন পেট ভরে ভাত খাও তখন খুব ভালো লাগে জানো? তোমার সাথে কালকের পর আবার কবে
দেখা হবে কে জানে। তাই ভালো লাগাটা জানিয়ে রাখলাম”।
আমি অনেক কষ্ট হলেও নওশীনকে বললাম, “ধন্যবাদ”।
নওশীন চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়ে বললো, “কাল অবশ্যই বাসায় চলে এসো। ঘরোয়া অনুষ্ঠান। সবাইকে
বলা হয়নি। তোমাকে অবাক লাগলেও সত্যি দাওয়াত দিলাম।আর আমাকে কিন্তু বললানা, তুমি এতো
দিন ছিলে কোথায়?”
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “কোথাও না”।
বিকেলে যখন ওর বাসায় এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে গেলাম, তখন সবার হাতে খিলাল আর দাতে
মাংশ। আমাকে দেখে নওশীন প্রায় না চেনার ভাব করলো। আমি একটু দেরী করে এসেছিলাম। আজকে
সব বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে বিদায় নিতে হলো তাই দেরী হয়ে গেলো। নওশীন আমাকে একসময় হাত দিয়ে
ইশারা করে ওদের বাসার ডাইনিং রুমে যেতে বললো। আমি খুব ইতস্তত বোধ করলাম, এভাবে হঠাৎ করে
বাসায় ঢুকে খেতে বসে যাওয়া ব্যাপারটা খুব লজ্জাজনক।নওশীন আমার পাশে বসে বললো, “দুপুরে
খাইছো? না খেয়ে আসলেও লাভ নেই। খাবার সব শেষ”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “কোন ব্যাপার না। তোমার জন্য একটা উপহার ছিলো”।
নওশীন মাথা নেড়ে বললো, “দেখাও তো। জীবনে প্রথম কিছু একটা দিচ্ছো”।
আমি হেসে পকেটে হাত দিতে দিতে বললাম, “আমি আসলে আংটিটা কেনার সময় খুব বিব্রত বোধ করছিলাম।
তুমি লেভেল ১ এ থাকার সময় আমাকে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের একটা এড দেখিয়েছিলে। একটা আংটি
দেখিয়ে বলেছিলে, ওটা তোমার খুব পছন্দ হয়েছে। কেউ তোমাকে উপহার দিলে সারাজীবন কৃতজ্ঞ
থাকতে।আমি সেদিন থেকে প্রায়ই নাস্তার টাকা জমাতাম, দুইমাস টিউশনীও করেছি। দেখোতো পছন্দ
হয় কিনা?”
নওশীন আমার হাত থেকে আংটি নিয়ে বাসার ভেতরে চলে গেলো।একটু পর তার মা কে ধরে নিয়ে এসে
বলো, “মা এই ছেলেটার কথা তোমাকে বলছিলাম না। এর সাথে আমাকে বিয়ে দেবে মা?”
আমি হা করে তাকায় থাকলাম।নওশীন কি কোনরকমে কোন ভুল বুঝেছে যে আমি তাকে পছন্দ করি ওই
ভাবে? এমন তো কোন ব্যাপার নেই, কখনও এমন কিছু বলিনি ওকে।
নওশীনের মা আমার দিকে তাকিয়ে গাল ধরে বললো, “ছোট্ট ছেলে তো। বিয়ে করলে তো তোকে পালতেও
হবে”।
আমি কোন শব্দ করছিনা। একসময় নওশীন আমার হাত ধরে বললো, “আমাকে বিয়ে করবে?”
আমি হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ওর চোখের দিকে একবার চোখ পড়েছিলো, আমি তাকাতে
পারিনি। নওশীন আমাকে পছন্দ করতে পারে, এমন ভাবে চাইতে পারে কখনোও ভাবিনি। আমার সময়টা
তখন ভালো ছিলোনা।আমি মাথা নিচু করে বসে ছিলাম।অবাক হয়ে ভাবছিলাম কি বলা যায়।
অনেকক্ষণ পর নওশীন নিজেই আবার হাসতে হাসতে বললো, “জোকস করেছি। তুমি আমাকে এত সুন্দর
একটা আংটি দিলে আমি কৃতজ্ঞ হয়ে তোমাকে দুই মিনিটের জন্য আমার জামাই বানিয়ে ফেলেছিলাম।
আমি জানি তুমি আমাকে পছন্দ করোনা। হাহা”।
আমি একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। সেদিন আবার বুঝতে পারলাম আমি অনেক ভীতু। আমার
মধ্যে কাউকে ভালোবাসার সাহসটা তৈরী হয়নি আজোও।নওশীনের থেকে বিদায় নিয়ে হলে ফিরে
আসলাম। ঘুম পাচ্ছে, খুব বেশি ঘুম পাচ্ছে।
একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলাম ঘুমাতে ঘুমাতে। দেখি আমার কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা, বাচ্চাটা
আমাকে বাবু বাবু বলে ডাকছে। আমি বাচ্চাটাকে মাটিতে নামিয়ে আমার পাশের বিশাল সমুদ্রের
দিকে তাকিয়ে ছিলাম। চারপাশটায় কেমন যেন নীলচে আলো। হঠাৎ আব্বা সামনে এসে হাজির হলেন।
আমাকে বললেন, “বাচ্চাটাকে জিজ্ঞাসা কর ওর ক্ষিধা লাগছে নাকি”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “ওকে একটু আগে নওশীন খাইয়ে দিয়েছে”।
কথাটা বলে নিজেই হতভম্ব হলাম। পাশে দেখি নওশীন দাঁড়ায় আছে। আমাকে জিজ্ঞাসা করছে,
“তুমি কি আমার উকুন মারার চিরুনীটা আবার চুরি করছো?”
এটুকু দেখে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ভোর ছয়টা বাজে। আমি নওশীনকে ফোন দিয়ে
বললাম, “আজকে বিয়ে করি চলো”।
নওশীন হাই তুলতে তুলতে বললো, “নাহ। সম্ভব না। কালকে বলছিলাম তো, তখন তো ভাব দেখালে”।
আমি ফোন রেখে দিলাম। একটা পাঞ্জাবী লাগবে। হালকা রঙের। আমার কটকটে রংগুলো পছন্দ না।
আটটার মধ্যে নওশীন হলের সামনে এসে পড়বে বলেই মনে হয়।
দুপুর দুইটায় নওশীনের বিয়ে হয়ে গেলো। আমার সাথে না, লাভলু ভাইয়ের সাথে। আমি হা করে তখন
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখছিলাম যখন সীমা আমাকে ফোন করলো।আমি ফোন ধরলে বললো,
“ভাই জ্বর ধরছে। তাড়াতাড়ি আসো। তোমারে খুব দেখতে মন চাইতাছে”।
আমি চলে যাওয়ার আগে নওশীনকে বিদায় জানাতে গেলাম। নওশীন তখন ওর বরের সাথে হাসিমুখে
ছবি তুলছে। আমাকে দেখে ও হাত নেড়ে ডাকলো।আমি কাছে গেলে বললো, “আমি সিদ্ধান্তটা ভুল নেইনি,
বিশ্বাস করতে পারো। তুমি আমাকে ভালোবাসোনা, আমি এটা জানি। তোমার চোখ আমি দেখেছি কাল।
জীবনে অনেক সুখী হও হাসিব। আমি খুব চাই তুমি একজনকে ভালোবাসো”।
আমি নিজ হাতে নওশীনকে বরের গাড়িতে তুলে দিলাম।জীবনে প্রথমবার ওর হাত ধরলাম। হাত ধরে
ওকে গাড়িতে বসালাম। ওর বাবা মা কাজিনরা সবাই ওর আশেপাশে ভীড় করে থাকলেও আমি ওর
পাশে পুরোটা সময় থাকলাম। ও যখন গাড়িতে উঠে বসলো, আমি তেমন ভীড়ের মধ্যে থেকেই ওকে দেখতে
থাকলাম। মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। যখন গাড়িটা ছাড়লো, ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার
চোখের পানি ফেললো। ব্যাপারটা খুব সিনেমেটিক হয়ে যাচ্ছে, আর আমার খুব হাহাকার লাগছিল। আমি
তাই চলে আসলাম। কি অদ্ভুত ব্যাপার, নওশীন আমার দেয়া আংটিটা পড়ে ছিলো।পুরোটা বিয়েতে।
She just did a joke, joke with me, my life and undoubtedly with her life.
ওর গাড়িটা চলে যাওয়ার পর আমি হা করে আরো অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম।লাল আলো নীল আলো
চারদিক, আমি সেই আলোকে পাশ কাটিয়ে হলের পথে যাত্রা শুরু করি। এখান থেকে হল প্রায় ৩ কি.মি
দূরে। ভাবছি হেটে হেটে হলে যাবো। কাপড় জামা গুছিয়ে গাবতলী যেতে হবে। সীমাকে বলা হয়নি এখন
আমি টিচার হয়ে গেছি, ভার্সিটির টিচার। সীমা অনেক খুশী হবে তাই না?
আমার প্রথম ক্লাস পরলো Alternating Current নিয়ে। আমি ক্লাসে যেয়ে হা করে দাঁড়িয়ে থাকলাম দুই
মিনিট। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, “আপনারা কেউ কি নদীর ঢেউ দেখেছেন? আমি যখন
আপনাদের এই কোর্সটি করাবো তখন অনেকবার এই নদীর ঢেউ একে দেখাবো। আমি আপনাদের শিখাবো
কিভাবে এই ইলেকট্রনের ঢেউ আমাদের পুরো পৃথিবীটা সচল রেখেছে। যারা আমার কাছ থেকে শিখতে
চান, তারা বইটিকে ব্যাগে ভরে ফেলুন। খাতা কলমের কোন দরকার নাই। আসুন আমরা কিছু শিখি”।
নওশীনের বিয়ের তিন বছর পর ও আমাকে একদিন ফোন করলো কড়া দুপুরে। আমি ফোন ধরে বললাম, “কেমন
আছো? তোমার মাথায় এখনো কি উকুন আছে?”
নওশীন হেসে বললো, “এখনো আছে। তুমি কেমন আছো হাসিব?”
আমি বললাম, “বেশ আছি তো। তুমি হঠাৎ করে আমাকে ফোন দিলে কেন?”
নওশীন আবারো হেসে বললো, “আমি এখন তোমার রুমে বসে আছি।ভাবলাম তোমার সাথে একটু দেখা
করি”।
আমি আমার রুমে ঢুকে নওশীনকে দেখে স্থির হয়ে গেলাম। কতদিন পর এমন একটা হাহাকার অনুভব
করলাম। কতগুলো দিন, শেষবার মনে হয়েছিলো যখন নওশীনের গাড়িটা আর দেখতে পাইনি। আমি ওকে একটু
সহজ হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, “কেমন আছো মেয়ে? কতদিন পর দেখা”।
নওশীন ওর চুল ঠিক করতে করতে বললো, “আমি জানো জানতাম না তুমি টিচার হয়ে গেছো। তুমি এতো
ভালো ছাত্র এটাও তো জানতাম না। আমি তো পড়াশোনার মধ্যে কখনই ছিলাম না। সারাদিন
তোমার সাথে ঘুরতাম টই টই করে। আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে তোমার কাছে এসেছিলাম”।
আমি মাথা নেড়ে বললাম, “বলো। শুনবো”।
নওশীন আমাকে বললো, তুমি কি সেদিন আমাকে সত্যি বিয়ে করতে? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে জানো,
গত তিনবছর ধরে প্রতিদিন আমার ভাবতে ইচ্ছে করে যে তুমি সত্যি চেয়েছিলে”।
আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। এমন একটা কিছু ও জিজ্ঞাসা করবে আমি জানতাম। আমি
কতদিন এই প্রশ্নটার উত্তর সাজিয়েছি। কিন্তু ভাবিনি কখনো যে এভাবে ওর মুখোমুখি বসে আমাকে উত্তর
দিতে হবে। আমি ওকে বললাম, “আমি খুব ভীতু ছিলাম, এবং এখনো আছি। এই ধরো তোমাকে এখন আমার খুব
মায়া লাগছে। বিয়ের এই তিন বছরে তুমি কত শুকায় গেছো।তোমার চোখ ভরা এত ক্লান্তি। আমার অনেক
মায়া লাগছে নওশীন। আমার আগেও লাগতো। আমি তোমাকে বলতে পারতাম না। আজ বললাম।
অর্থহীন, তোমাকে যাই বলি সব অর্থহীন। তুমি আর কখনো আসবেনা। আমি জানি তুমি মাঝে মাঝে
আমাকে এখনও ফোন করো অজানা নাম্বার থেকে। আমার ভাবতে ভালো লাগে, তুমি আমাকে মনে
করো। কিন্তু এখন মনে হয় কাজটা আর ঠিক হচ্ছেনা। তুমি তোমার মত থাকো। নিজের সংসার নিয়ে সুখে
শান্তিতে থাকো। আমাকে আমার মত থাকতে দাও”।
নওশীন আমার হাত ধরে বললো, “আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আমি গত একবছর ধরে অনেক ধকলের উপর
দিয়ে গেছি। মাথাটা ঠিক নেই। কাল তোমাকে নিউমার্কেটে দেখার পর থেকে মাথাটা খুব এলোমেলো
লাগলো। দেখলাম তুমি হাসতে হাসতে কি যেন কিনছো। আমার ভালো লাগেনি। আমি তো ভালো নেই, তুমি
ভালো থাকবে কেন?”
নওশীন চলে যাওয়ার পর আমি বাসায় চলে গেলাম। শেষ ক্লাশটা আর করালাম না। বাসায় যেয়ে
বিছানায় পড়ে গেলাম। আমার গা তখন জ্বরে কাপছে। শরীরে কোন জোর পাচ্ছিলাম না। ক্লান্ত,
অনেক ক্লান্ত আমি।
রাতে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন প্রায় একটা বাজে। আমি নওশীনকে ফোন দিলাম। ও ফোন ধরে ঠিকমত
হ্যালো বলার আগেই আমি ওকে খুব দ্রুত বললাম, “তুমি তোমার ইচ্ছায় সব করেছো, আমি তোমার কোন
সিদ্ধান্তে ছিলাম না নওশীন। আমাকে তুমি কখনও কিছু বলার সুযোগ দাওনি। যেদিন তুমি নিজ ইচ্ছায়
বিয়ে করলে আমি সেদিন তোমার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছিলাম। আমি অপেক্ষা করেছিলাম তুমি আমার
দিকে একবার তাকাবে। একবার আমার কথা শুনবে। তুমি আমাকে শোননি, তুমি আমার দিকে একবারও
তাকাওনি। এখন বলো, আমি কেন ভালোভাবে বাচার অধিকার রাখিনা? কেন তোমার হিংসা হবে
আমাকে দেখলে?”
নওশীন কাঁদছিলো, আমি শুনছিলাম। অনেক আগে তাকে যেমন করে মায়া করতাম ঠিক তেমন করে তাকে
খুব মায়া লাগলো আবার।আমি ওকে বললাম, “তোমার একটা ছোট্ট মেয়ে আছে তাই না?”
নওশীন অনেকক্ষণ পর উত্তর দিলো, “আছে। ওর বাবার সাথে থাকে। ওর বাবা আরেকটা বিয়ে করেছে।
আমারই এক বান্ধবীকে। দুজন মিলে আমার মেয়ের খুব যত্ন করে, ছবি তুলে প্রায়ই ফেসবুকে দেয়। আমি
দেখি, আমার মেয়েটার ছবি দেখি।হাত দিয়ে মনিটরে ওকে ছুয়ে দেই। মাঝে মাঝে শুধু রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়,
মাথায় খুব যন্ত্রণা হয়। মনে হয় আমার মেয়েটা কাঁদছে।দেড় বছর বয়স মাত্র, মাকে ছাড়া এত ছোট্ট
বাচ্চা থাকতে পারে বলো?”
পরদিন দুপুরে সীমা আমাকে ফোন করলো লন্ডন থেকে। ফোন ধরে তার কি কান্না। আমার বললো, “ভাই
তুমি মামা হবা। আমি আজকে মাত্র জানলাম। শুভ আমার জন্য এই এত্ত বড় একটা চকোলেট নিয়া
আসছে। আমি তোমারে অর্ধেকটা পাঠায় দেই?”
আমি হাসতে হাসতে বললাম, “নাহ ফ্রিজে রেখে দে। বাচ্চা বড় হলে ওকে দিয়ে বলবি এটা মামা দিছে।
সীমা, শুভ ভালো আছে?”
সীমা মাথা নাড়ে। আমাকে বলে, “ভাই সবাই ভালো। আমার মনটা ভালো নাই খালি। তোমার
কথা খুব মনে পড়ে”।
আমি ফোন ধরে থাকি। সীমার কথা শুনি। আজকাল খুব কমই এমন হয় আমি কোন আপনজনের কথা শুনি।
আজকে নওশীনের সাথে দেখা করবো, ওর সাথে আবার আগের মত ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছা করে।
সকালে না খেয়ে ওর সামনে মুখ ভার করে বসে থাকবো, আর ও আমাকে আদর করে হাত ধরে টেনে নিয়ে
যাবে খাওয়াতে। এমন কি হবে?
নওশীনের বাসায় যখন গেলাম তখন ওরা সবাই খাওয়া দাওয়া করছে। নওশীন দরজা খুলে বাহিরে
এসে বললো, “চলো রবীন্দ্র সরণী যাই। অনেকদিন হাটা হয়না। তোমাকে আজকে দুপুরে খাওয়াবো ভূতের
আড্ডায়। মাটন বিরিয়ানী আর এক গ্লাস বোরহানী”।
আমি বললাম, “একটু বসি আগে। আমাকে এক গ্লাস পানি খাওয়াবে?”
নওশীন পানি আর সাথে পিঠা নিয়ে আসলো। আমাকে বললো “খাও। ভালো লাগবে।তোমার কি শরীর
খারাপ”।
আমি হাত নেড়ে বললাম, “নাহ ভালো আছি। নওশীন তোমাকে একটা কথা বলার দরকার। বলবো?”
নওশীন কিছু না বলে ওর পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি অনেকক্ষণ ইতস্তত করে এরপর বললাম,
“থাক পরে বলবো”।
নওশীন ওর গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “ভালো করেছো না বলে। আমার একটা ভালো
খবর আছে। আমাকে আমার স্বামী ফোন দিয়েছিলো কাল রাতে। সে আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমাকে
বলে তার দ্বিতীয় বউ একদম ভালো না। তাকে আমার মত সত্যিকারের ভালোবাসেনা”।
আমি হেসে বললাম, “তুমি তাকে ভালোবাসতে?”
নওশীন কিছু বললোনা। আমিও কিছু বললাম না। যাওয়ার আগে ওকে শুধু শুভকামনা জানালাম।
বাসায় ফিরে আসতে আসতে রাত হয়ে গেলো। কিছু খেতে ইচ্ছা হচ্ছেনা। আজ সারাদিন শুধু নওশীনদের
বাসার ওই পিঠা খেয়েছি। বিছানায় যেয়ে যখন বসলাম মাথাটা এমন করে ঘুরানো শুরু করলো যে আমি
নিজের অজান্তেই পড়ে গেলাম। যখন হুশ ফিরলো তখন ভোর হয়ে গেছে। আমার শরীর ভরা জ্বর।
গ্রীষ্মকালীন জ্বর। চারপাশে কেমন যেন হলুদ হলুদ দেখছিলাম। আমি আবার জ্ঞান হারালাম।
এখন একটা স্বপ্ন দেখছি। সেই খুব প্রিয় স্বপ্নটা। আমি, নওশী্ন, বাবা আর আমাদের বাবুটা। বাবা
আমাকে এবার কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, “ভাত খাস না কেন? ভাত না খেলে তো আরো
জ্বর আসবে”।
আমি অপরাধীর মত করে বাবাকে বললাম, “বাবা তোমাদের সাথে খুব দেখা করতে ইচ্ছা করে। তাই
না খেয়ে খেয়ে মরে যাচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে”।
বাবা আমার হাত ধরে বললো, “তুই যখন আমার কাছে আসবি তখন তোকে এই বড় বড় মাছ রান্না করে
খাওয়াবো। তোর মা তোকে নিজ হাতে খাইয়ে দিবে। প্রাণ ভরে খেতে পারবি তো?”
যখন জেগে উঠলাম তখন চারদিক অন্ধকার। ঘরে কেমন যেন একটা উৎকট গন্ধ। আমার খুব এক গ্লাস
পানি খেতে ইচ্ছা করছিলো, কিন্তু ওঠার শক্তিটাও পাচ্ছিলাম না। ঠান্ডাও লাগছিল, হয়তো জ্বরের
জন্য। আমি অনেক কষ্টে জানালার পর্দা তুলে আকাশের দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম। আকাশে
আজকে একটাও তারা নেই। আমি তবুও কাথা মুড়ি দিয়ে তারা গোনার চেষ্টা করি। আমার ফোন
অনেকক্ষণ ধরে একটানা বাজছে। একসময় বিরক্ত হয়েই ফোনটা ধরলাম। ওপাশ থেকে নওশীন বললো,
“হাসিব তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”
আমি দুর্বল কন্ঠে বললাম, “বলো”।
নওশীন খুব কাঁদতে কাঁদতে বললো, “তোমার কি মনে হয়েছে একবারও যে আমি উপায় না দেখে তোমার
কাছে সেদিন গিয়েছিলাম? আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে তাই তোমার সঙ্গ পেতে গিয়েছিলাম?”
আমি কিছু বললাম না। অপেক্ষা করলাম নওশীন আরো কি বলে তা শোনার। নওশীন একটু চুপ থেকে
বললো, “আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিলাম। সাহস করতে পারিনি। আমি জানি আমি তোমার
সাথে ভুল করেছি। আমি খুব ভুল করেছি। তিন বছর আগে আমার তোমাকে বোঝা উচিত ছিলো। আমি না বুঝে
খুব অন্যায় করেছি হাসিব। তুমি তোমার জীবনটা গুছিয়ে নাও”।
আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, “আমার তোমার জন্য অপেক্ষা করতে ভালো লাগে। আমি প্রতিদিন
তোমার জন্য অপেক্ষা করি। প্রতিদিন নওশীন। এবং আমি জানতাম তুমি একদিন নিজ থেকে বুঝবে।দোষটা
আমারও, তোমাকে কখনো হাত ধরে বলা হয়নি যে প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে যখন একটা
পরিবারের কথা ভাবতাম, তখন তুমি কেমন করে যেন একটা বিতিকিচ্ছিরি শাড়ি পড়ে আমার সামনে এসে
হাজির হয়ে যেতে। আমাকে খুব মমতা নিয়ে বলতে আসো একসাথে সমুদ্রের স্রোত দেখি। আমি পথ হারিয়ে
ফেলেছি নওশীন। জীবনটা এখন আমার কাছে বিশাল একটা ধাধা। এখন খুব ক্লান্ত আমি, কথা
বলতে পারছিনা। তুমি অনেক সুখী হও”।
ফোনটা কেটে দিয়ে আমি আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম।
Thanks for reading the full post. Now, please leave a comment below and give your feedback.
No comments:
Post a Comment